৬৭ শতাংশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পড়ে আছে মিরপুর বিআরটিএতে
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের স্থবির অবস্থা কেটেছে। স্বাভাবিক গতি ফিরেছে লাইসেন্স সরবরাহে। তবে গ্রাহকদের একটি বড় অংশ লাইসেন্স তৈরি হওয়ার পরও তা সংগ্রহ করছেন না।
এই অবস্থায় বিআরটিএ কর্মকর্তারা বিপাকে রয়েছেন। তারা গ্রাহকদের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোসহ বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে চলেছেন।
বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ১০ হাজার ২০৭টি স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে চার হাজার ১৯৪টি ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হয়েছে গ্রাহকদের কাছে। বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে পড়ে আছে বাকি ছয় হাজার ১৩টি স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স- এসব স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স গ্রাহকরা নিতে আসেননি। আগে আবেদন করেছিলেন এমন গ্রাহকদের জন্য এসব স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে বিআরটিএর কাছে সরবরাহ করছে বিএমটিএফ।
অন্যদিকে, নতুন আবেদনকারীদের স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স দিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটিজ কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে সরবরাহ করেছে ১৮ হাজার ১৫০টি স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স। তার মধ্যে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ২৬২টি। বাকি ১২ হাজার ৮৮৮টি লাইসেন্স পড়ে রয়েছে বিআরটিএ এর এই কার্যালয়ে।
দেখা গেছে, দুটো প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রায় ৬৭ শতাংশই বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে পড়ে আছে।
বিআরটিএর লাইসেন্স শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঢাকা পোস্টকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে বিআরটিএ থেকে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সাড়া দেওয়ার প্রবণতা কম।
বিআরটিএ কর্মকর্তাদের দাবি, মোবাইল ফোনের সিম বদল হওয়ায় বহু গ্রাহক বার্তা না পাওয়ায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিআরটিএ মিরপুর অফিসের লাইসেন্স শাখার সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, বহু গ্রাহক মোবাইল ফোনের সিম পরিবর্তন করে ফেলেছেন। ফলে মেসেজ পাঠালেও তাদের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমরা নির্দিষ্ট নম্বরে বারবার ফোন দেওয়ার পর বন্ধ পাচ্ছি।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে আটকে ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স। গত ১০ অক্টোবর থেকে আটকে পড়া এসব লাইসেন্স গ্রাহককে দেওয়া শুরু করেছে। আটকে পড়া ১২ লাখ ৪৫ হাজার লাইসেন্স মুদ্রণের জন্য গত ২৯ আগস্ট বিএমটিএফের সঙ্গে বিআরটিএ চুক্তি সই করে। এরপর গত ১০ অক্টোবর থেকে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স সরবরাহ শুরু করেছে বিআরটিএ। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে আটকে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ শেষ করবে বলে বিআরটিএ জানিয়েছে।
প্রায় দুই বছর ধরে বিআরটিএ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারেনি। তবে বিআরটিএ থেকে চালকদের দেওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ। মোটরযান চালানোর অস্থায়ী অনুমতিপত্র হিসেবে তারা তা ব্যবহার করছেন। লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছিলেন না ১২ লাখ ৪৫ হাজার গাড়িচালক। তাদেরকে লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়েছে। নতুন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স তৈরি করে বিআরটিএর কাছে সরবরাহ করেছে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য বিআরটিএর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় এই প্রতিষ্ঠান। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দুই দফায় সময় বাড়িয়ে নেয়। এখন প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্স সরবরাহ করছে শুধু নতুন আবেদনকারীদেরকে। জানা গেছে, চুক্তি অনুসারে, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স পাঁচ বছরে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে।
প্রসঙ্গত, দেশে গাড়ি চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্বাভাবিক সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে। টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে বিআরটিএর চুক্তি শেষ হয় গত ২২ জুন। চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালের ২২ জুন পর্যন্ত থাকলেও বিপুল চাহিদার ফলে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সরবরাহ শেষ হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। টাইগার আইটির ১৫ লাখ স্মার্ট কার্ড গত ২২ জুনের মধ্যে দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১২ লাখ কার্ড বিতরণ শেষ করে।
পিএসডি/এইচকে