নভেম্বরে ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি
গত নভেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৭৯টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। সারা দেশে সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১৩ জন, আহত হয়েছেন ৫৩২ জন। এর মধ্যে ১৫৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮৪ জন, যা মোট মৃত্যুর ৪৪.৫৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১.৬৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৩.২৪ শতাংশ।
এই সময়ে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত এবং ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ২ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এটি জানানো হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। মোটরসাইকেলে প্রাণহানিও বেড়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৬টি (৪১.১৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৩১টি (৩৪.৫৬ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি (১৩.৯৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৩৫টি (৯.২৩ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (১.০৫ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর ৮৯টি (২৩.৪৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৩টি (৩৫.০৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯১টি (২৪ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৫৯টি (১৫.৫৬ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৭টি (১.৮৪ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২১.৪২ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক ৩.৮৪ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ ৫.৩১ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১১.৫৩ শতাংশ, মোটরসাইকেল ৩০.৫৮ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা-টেম্পু) ১৯.৯৬ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-বোরাক-মাহিন্দ্র-টমটম) ৪.৩৯ শতাংশ এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল ১.৯৩ শতাংশ।
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৫ শতাংশ, সকালে ২৭.১৭ শতাংশ, দুপুরে ১৭.৪১ শতাংশ, বিকেলে ২২.১৬ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬.৮৬ শতাংশ এবং রাতে ২১.৩৭ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬.৫৭ শতাংশ, প্রাণহানি ঘটেছে ২৬.৫১ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৯৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩.৪২ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯.৩২ শতাংশ, প্রাণহানি ২১.৮১শতাংশ; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.১৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.৭১শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.২১ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.০৪ শতাংশ; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.২৪ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.০৪ শতাংশ; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৭৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৯.৭৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.৭১ শতাংশ ঘটেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন;
বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি; গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সংগঠনটি সড়কে দুর্ঘটনারোধে কিছু সুপারিশ করেছে। তার মধ্যে আছে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; 'সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮' বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
পিএসডি/জেডএস