টেলিযোগাযোগ নিরাপত্তায় বিটিআরসির-এনটিএমসির চুক্তি
দেশের প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম ও টেলিযোগাযোগ সেবার নিরাপদ ব্যবহারকে আরও এগিয়ে নিতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উপস্থিতিতে এ চুক্তি সই হয়।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের রেডিও কমিউনিকেশন স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ডিরেক্টরের পরিচালক ড. সোহেল রানা এবং এনটিএমসির পক্ষে সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) শাওগাতুল আলম চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব খলিলুর রহমান, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং এনটিএমসির পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়ার পাশাপাশি বিটিআরসি গ্রাহক সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রতিনিয়ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা এনটিএমসির সঙ্গে কাজ করে আসছে। এ দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা গেলে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সমন্বয়ের মাধ্যমে জনগণ ও রাষ্ট্রের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে আজ বাস্তবে নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে আজ অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে।
অপরাধের ধরণ পাল্টে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সাইবার অপরাধ বাড়বে, সেজন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত করছি। বিটিআরসি কর্তৃক এনইআইআর চালু হওয়ায় মুঠোফোন শনাক্ত করাটা সহজতর হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর প্র্রথম দেশ যার নামের আগে ডিজিটাল শব্দটি ব্যবহার করছে। এনটিএমসির সঙ্গে বিটিআরসির সমঝোতা স্বাক্ষরের ফলে তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত কাজের জায়গাটা আরও গতিশীল হবে। বর্তমানে অপরাধীর অবস্থান দ্রুত শনাক্ত করাটা ডিজিটাল প্রযুক্তির ফল। ভবিষ্যতে নতুন প্রযুক্তি জনগণের কল্যাণে ব্যবহার হবে।
১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ফাইভজি প্রযুক্তিতে পরীক্ষামুলকভাবে প্রবেশ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি জাতীয় জীবনে অকল্পনীয় পরিবর্তন আনবে। তবে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি সমগ্র জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল বাস্তবতা সর্ম্পকে অবহিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে স্পেকট্রামের কমিশনার প্রকৌশলী একেএম শহীদুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশর প্রধান চালিকা শক্তি হল তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাত। আর তথ্য প্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিটিআরসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে ১৪ প্রতিষ্ঠান মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শতভাগ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোসহ অপরাধ কার্যক্রমে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, এনটিএমসির সাথে সমঝোতা স্মারকের ফলে সাইবার জগত আরো নিরাপদ হবে এবং অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পরবর্তীতে সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম, এনওসি অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডাটাবেজ এবং ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার এর কার্যক্রম কিভাবে সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে বিশদ উপস্থাপনা করেন স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল আলম ।
এনটিএমসির পরিচালক জিয়াউল আহসান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্রের সব সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করছে, এক্ষেত্রে বিটিআরসি এনটিএমসিকে সর্বাত্মক সহায়তা করে আসছে। এনটিএমসির ইন্টিগ্রেটেড ইনটেলিজেন্স সিস্টেম এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী ও তদন্ত সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মের সকল সিস্টেম সমন্বিত হয়ে কাজ করলে তথ্যের স্বচ্ছতা বাড়বে এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম সহজতর হবে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেরুদণ্ড হচ্ছে বিটিআরসি। ফোরজি তরঙ্গ বরাদ্দ, সীমান্ত এলাকায় টাওয়ার নির্মাণ, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এক দেশ এক রেট চালু, মোবাইল ইন্টারনেটের ন্যূনতম গতি ১৫ এমবিপিএস ও ব্রডব্যান্ডের ২০ এমবিপিএস নির্ধারণের উদ্যোগের পাশাপাশি কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে কাজ করা হচ্ছে, যার সুফল জনগণ খুব শিগগিরই পাবে।
ইতোমধ্যে সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে গ্রাহকের মোবাইল সিম নিবন্ধন, এনওসি অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডাটাবেজ এবং ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার তথা মোবাইল হ্যান্ডসেটের তথ্য নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রযুক্তি বিটিআরসিতে স্থাপিত হয়েছে, যার মাধ্যমে বর্তমানে সিম কার্ড, মোবাইল হ্যান্ডসেট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রকে একসঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়। এনইআইআর প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকের হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাইকরণসহ চুরি হয়ে যাওয়া হ্যান্ডসেট উদ্ধার কার্যক্রম সহজতর হয়েছে।
এমআই/আইএসএইচ