জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে সরাতে উপায় খুঁজছে সরকার
আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার উপায় খুঁজছে সরকার। আইনে বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ায় এ নিয়ে চলছে পর্যালোচনা।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করতে হলে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের মাধ্যমেই করতে হবে। তবে দল থেকে বহিষ্কারের পর তিনি মেয়র পদে থাকতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। সেজন্য তাকে অপসারণের জন্য সব ধরনের উপায় খুঁজছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
স্থানীয় সরকার আইনের ১৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত থেকে দণ্ডিত হলে মেয়র তার নিজ পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, কোনো ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্র আদালত আমলে নিলে এবং অসদাচরণ প্রমাণিত হলে মেয়রকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা যাবে।
সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে এ আইনে বলা হয়, যে ক্ষেত্রে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণের জন্য ১৩ নম্বর ধারার অধীন কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়েছে অথবা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে ক্ষেত্র অনুযায়ী মেয়রকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।
আর আইনের ১৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত থেকে দণ্ডিত হলে মেয়র তার নিজ পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন।
এ নিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আইনটি দেখা হচ্ছে। আইনিভাবে তার অবস্থান কী হবে, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। পর্যালোচনায় দু-একদিন সময় লাগতে পারে।
সরকার চাইলে অনেক কিছু করতে পারে
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের হাত অনেক লম্বা। সরকার চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে পারে, বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাকে বরখাস্ত করতে পারে।
যেহেতু দল থেকে বহিষ্কারের পর কী করা যাবে সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই, তাই জাহাঙ্গীরকে বরখাস্ত করা সহজ হবে না বলে মনে করেন সুজন সম্পাদক।
তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করেন, জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের মনোনীত বলে আমি ভোট দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি এখন দলে নেই, সেজন্য তার প্রতি আমার আস্থা নেই- এই যুক্তিতে সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে যেতে পারবেন। এরপর আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও গত সেপ্টেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে তাকে কটূক্তি করতে শোনা যায়।
এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। এতে গাজীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আওয়ামী লীগ। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে তাকে এর জবাব দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ নভেম্বর গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সেদিন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সবাই একবাক্যে তার (জাহাঙ্গীর আলম) বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে।
বহিষ্কারের পরদিন দুপুরে গাজীপুর মহানগরের হারিকেন পাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন, শেখ হাসিনাকে আমার বিষয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দেওয়া হয়েছে। মূল কথা বাদ দিয়ে আংশিক কথা দিয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা সোমবার বিকেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। যেহেতু দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেজন্য মেয়র পদ থেকে অপসারণের বিষয়টি সামনে এসেছে। এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। অফিসিয়ালি চিঠি পেলে বিষয়টি সম্পর্কে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে।
এসএইচআর/আরএইচ