দুর্নীতিবাজদের বর্জন করুন, ঘৃণা করুন
২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যাত্রা শুরু হয়। দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১৬টি বছর। যুগ পেরিয়ে ১৭তম বছরে পা রাখল রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি।
আজ রোববার (২১ নভেম্বর) দুদকের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দুদকের এ যাত্রায় এরই মধ্যে কমিশন গঠন ও পুনর্গঠিত হয়েছে ছয়বার।
বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের সমন্বয়ে গঠিত প্রথম কমিশনের যাত্রা। এরপর যথাক্রমে সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান ও ইকবাল মাহমুদের পর ২০২০ সালের ১০ মার্চ দায়িত্ব নেন বর্তমান দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর পেরিয়ে গেছে আট মাস।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আজ দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ছোট পরিসরে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
দুদকের বিগত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অভিযোগের হার বেড়েছে অনেক। তবে এখনো জনগণের প্রত্যাশা সেভাবে পূরণ করতে পারেনি। বরং বিভিন্ন সময়ে উল্টো চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
যদিও সীমিত জনবল নিয়ে দুর্নীতির পাঁচ হাজারের বেশি অনুসন্ধান ও মামলার চাপে রয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনগণের প্রত্যাশা কতটুক পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, এটা জনগণই ভালো বলতে পারবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। চেষ্টার কমতি নেই, চেষ্টা করে যাব। প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি, এটা জনগণই মূল্যায়ন করবে।
‘বাচ্চাদেরকে বলব, তোমরা দুর্নীতিবাজ পিতার সন্তান হয়ে থাকবা কি না চিন্তা করে দেখ। নারীদের বলব, আপনারা দুর্নীতিবাজ স্বামীর অর্থে চলবেন কি না চিন্তা করে দেখবেন। আর যারা চাকরি করছেন তাদের বলব, আপনারা দুর্নীতিবাজ নিয়োগদাতার চাকরি করবেন কি না ভাবুন। এটা জনগণের প্রতি আমার আহ্বান।’
তিনি আরও বলেন, জনগণের উদ্দেশ্যে একটাই মেসেজ (বার্তা), দুর্নীতি করবেন না। দুর্নীতি যারা করে তাদের বর্জন করবেন। তাদেরকে ঘৃণা করেন। দুর্নীতির টাকা দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে খাওয়াবেন না।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দুদকে তিন হাজার ৮৭৪টি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন ও এক হাজার ৫২১টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
পাঁচ বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুর্নীতি-অনিয়ম সংক্রান্ত ২০১৬ সালে ১২ হাজার ৯৯০টি অভিযোগ, ২০১৭ সালে ১৭ হাজার ৯৮৩টি, ২০১৮ সালে ১৬ হাজার ৬০৬টি, ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৩৭১টি এবং ২০২০ সালে মোট ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুদকে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে। অভিযোগ বাড়লে মামলা সংখ্যা আগের অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
অন্যদিকে, ২০১৬ সালে জমা পড়া অভিযোগ থেকে এক হাজার সাতটি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। আর ২০১৭ সালে ৯৩৭টি, ২০১৮ সালের অভিযোগ থেকে এক হাজার ২৬৫টি, ২০১৯ সালে এক হাজার ৭১০টি এবং ২০২০ সালে ৮৮২টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেয় সংস্থাটি।
মামলার পরিসংখ্যানে অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দুদক মামলা করেছিল ৩৫৯টি। পরের বছর ২০১৭ সালে ২৭৩টি, ২০১৮ সালে ২১৬টি, ২০১৯ সালে ৩৬৩টি এবং ২০২০ সালে ২৮৫টি। অর্থাৎ মামলা তুলনামূলক কমেছে।
আরএম/এইচকে