বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া আশ্বাসেই ঝুলছে!
রাজধানীর ১২৮টি রুটে বাস-মিনিবাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে। প্রথা চালু থাকলেও বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে কোনো কোনো বাস কোম্পানি হাফ ভাড়া নেওয়ার জন্য রাজি হয়েছে। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও ৯টি দাবির মধ্যে হাফ ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি ছিল।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে কবে করা হবে তা স্পষ্ট নয়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও মহিলা কলেজে একটি অনুষ্ঠানের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে রাজধানীতে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। শনিবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের হাফপাসের দাবিকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সড়কের উভয় পাশে ১০টির বেশি বাস ভাঙচুর করা হয়।
এদিকে, একমাত্র সরকারি সড়ক পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসেও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে শনিবার দুপুরে বলেছেন, আমাদের সরকারি বাসে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় না। এ বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশ আমাদের কাছে আসেনি। সরকার নির্দেশ দিলে আমরা বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেব। এখন বিআরটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্যে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য প্রায় দেড়শ বাস রয়েছে বিআরটিসির। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাস চুক্তিতে নিতে চাইলে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিয়ে থাকি। ছোটবেলায় শিক্ষার্থী হিসেবে আমরাও বাসে হাফ ভাড়া দিয়েছি। এখন তো সেই পরিস্থিতি নেই। শিক্ষার্থী অনেক বেড়েছে।
বেসরকারি বাস মালিকরা বলছেন, হাফ ভাড়া বাস্তবায়ন হলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্ল্যাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে হাফ ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা নেই। আইনগত ভিত্তির ওপর এই দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি।
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বেড়েছে। তার প্রেক্ষিতে গত ৭ নভেম্বর থেকে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়রোধে গত ১০ নভেম্বর থেকে অভিযানে নেমেছে বিআরটিএ ও পুলিশ। তারপরও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা কমেনি। মিরপুরসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে যাত্রী তোলেও অতিরিক্ত ভাড়া না দেওয়ায় নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হাফ ভাড়া নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা চলছে। শেষ পর্যন্ত তা আন্দোলন কর্মসূচিতে গড়াচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হেনস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজের চার শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এসব কর্মসূচি ও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের প্রতিনিয়ত বাকবিতণ্ডার পরও হাফ ভাড়া প্রবর্তন করতে অংশীজনেরা বৈঠক করছেন না। ফলে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সমস্যার সমাধান করা জরুরি।
গত ১৫ নভেম্বর রাজধানীর দিয়াবাড়ি-জুরাইন রুটের রাইদা পরিবহনের বাসে হাফ ভাড়া দিতে চাইলে বাসশ্রমিকদের রোষানলে পড়েন ওই এক শিক্ষার্থী। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীকে রামপুরা যাবার আগেই বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। ওই শিক্ষার্থী পরে রামপুরায় সহপাঠীদের বিষয়টি জানালে শিক্ষার্থীরা ওই বাস কোম্পানির ৫০টি বাস আটকে রাখে।
আর বিহঙ্গ পরিবহনের বাসে নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসের চালকের সহকারীর অশোভন আচরণের জেরে ১৭ নভেম্বর রাতে ভিক্টোরিয়া পার্ক সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেটের সামনে সড়কে কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পিএসডি/ওএফ