ডিসেম্বরে চূড়ান্ত হচ্ছে নতুন ড্যাপ, গুরুত্ব পাচ্ছে যানজট নিরসন
বিদ্যমান নানা সমস্যা কমিয়ে পরিকল্পিত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ‘ড্যাপ’। রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে ড্যাপে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে।
রাজউকের উদ্যোগে প্রণীত নতুন ড্যাপে থাকছে, ভূমি পুনর্বিন্যাস, উন্নয়নস্বত্ব, প্রতিস্থাপন পন্থা, ভূমি পুনঃউন্নয়ন, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, উন্নতিসাধন ফি, স্কুল জোনিং ও ডেনসিটি জোনিং। ওয়ার্ডভিত্তিক জনঘনত্বের বিষয়ে দিকনির্দেশনাও থাকবে সংশোধিত ড্যাপে। এছাড়া, সড়ক, উন্মুক্ত স্থান এবং পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্যুয়ারেজসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা সরবরাহের সামর্থ্য বিবেচনায় নতুন ভবনের উচ্চতা নির্ধারণে কাজ করছে রাজউক।
রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে রিং রোড, বাস রুট র্যাশনালাইজেশন, মেট্রোরেল চালু ও খাল ব্যবহার উপযোগী করে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগকে প্রস্তাবিত ড্যাপে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে
সংশোধিত ড্যাপে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকার চারপাশের ৫৬৬ কিলোমিটার নদীপথ সচল করা এবং এক হাজার ২৩৩ কিলোমিটার সড়ককে হাঁটার উপযোগী করা। এ পরিকল্পনায় শহরের বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে স্কুলভিত্তিক উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে রিং রোড, বাস রুট র্যাশনালাইজেশন, মেট্রোরেল চালু ও খাল ব্যবহার উপযোগী করে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগকে প্রস্তাবিত ড্যাপে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সড়ক, জল ও রেলপথকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও সুপারিশ করা হয়েছে এ পরিকল্পনায়।
প্রস্তাবিত ড্যাপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মোট ৪৬৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। পরে জরিপ করে প্রতিটি ব্লকের জনসংখ্যার ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধা এবং সেখানে উন্নয়নের ধরনের ওপর ভিত্তি করে আবাসিক ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় দুই হাজার ১৯৮ কিলোমিটার জলাধার সিএস রেকর্ড অনুযায়ী উদ্ধার করে সচলের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এসব এলাকাকে বিনোদন স্পটে পরিণত করারও সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে রাজধানীর যানজট অনেকাংশেই কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধিত এ ড্যাপ চূড়ান্ত করা হবে
বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে রাজধানীর যানজট অনেকাংশেই কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধিত এ ড্যাপ চূড়ান্ত করা হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে ড্যাপে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ঢাকার চারপাশের নদী-খাল সচল করে সমন্বিত যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে, সেটি হলে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে।
সংশোধিত ড্যাপ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে এরিয়া নির্ধারণ করা হবে। যদি কোথাও পরিবর্তন বা সামঞ্জস্য আনার প্রয়োজন হয়, নীতিমালার ভিত্তিতে কন্টিনিউয়াসলি তা করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ড্যাপ চূড়ান্ত হবে বলে আমরা আশাবাদী। কারণ এর মধ্যে আমরা অনেক কাজ করে ফেলেছি। দাফতরিক অনেক কাজও শেষ হয়েছে। খসড়াও প্রণয়ন করা হয়েছে।
এদিকে, গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে প্রস্তাবিত ড্যাপ ও ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বিষয়ে রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি শামসুল আলামিন (কাজল) বলেন, প্রস্তাবিত ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) ২০১৬-২০৩৫ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০২১ বাস্তবায়ন হলে ভবনের আয়তন প্রায় ৩৩ শতাংশ থেকে ৫৩ শতাংশ কমে যাবে। নতুন আইনে ২০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন পাঁচ কাঠা জমিতে পাঁচতলা উচ্চতাবিশিষ্ট বা নয় হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের ভবন করা যাবে না। একইভাবে ২০ ফুটের কম রাস্তা সংলগ্ন জমিতে তিন বা চারতলার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণের সুযোগ থাকবে না।
এর আগে, পাঁচ বছর মেয়াদি ড্যাপের মাস্টার প্ল্যান প্রথম প্রণয়ন করা হয়েছিল ২০১০ সালে। ২০১৫ সালে প্রথম ড্যাপের মেয়াদ শেষ হয়। বর্তমানে সময় বাড়িয়ে নগর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে রাজউক। সংশোধিত নতুন ড্যাপের মেয়াদ হবে ২০ বছর।
এবার ড্যাপের খসড়া বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাতেই এটি গেজেটভুক্ত হবে। বাংলাতে এর খসড়া প্রকাশ করায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ সহজে মতামত ব্যক্ত করতে পেরেছেন। সবার মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে খসড়া ড্যাপের বিজ্ঞানভিত্তিক ও যৌক্তিক কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।
ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, নগর বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা ড্যাপ প্রস্তুত করেছি। আগের ড্যাপের সঙ্গে নতুন করে অনেক কিছু সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, শিগগিরই ড্যাপ বাস্তবায়ন শুরু হবে। কোন ওয়ার্ডে, কোন এলাকায় কত রাস্তাঘাট আছে, তার ওয়ার্কিং পেপার আমরা প্রস্তুত করেছি।
ড্যাপ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ড্যাপ নিয়ে ইতোমধ্যে স্টেকহোল্ডারসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। নতুন ড্যাপে যানজট নিরসনের জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে নিঃসন্দেহে সেগুলো খুবই সময় উপযোগী। যেভাবে জনকল্যাণ হবে, সেভাবেই ড্যাপ বাস্তবায়ন করা উচিত। সেক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত হবে না। দ্রুত ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে, কারো দাবির মুখে যেন নাগরিক সুবিধার পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত না হয়।
এএসএস/আরএইচ