ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন বন্ধ
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সব পণ্য আনা নেওয়া বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিকরা। তবে চট্টগ্রাম নগরীতে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও অল্প পরিমাণে চলছে গণপরিবহন।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্দরের ভেতরে সবকাজ স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। তবে বাইরের কোনো গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে আসছে না। বন্দর থেকে পণ্য নিয়েও কোনো গাড়ি বের হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার এমনিতেই গাড়ি কম বের হয়। তবে ধর্মঘট চলমান থাকলে বন্দরের ওপর এর প্রভাব পড়বে।
চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাঈন উদ্দিন বলেন, গাড়ির মালিকপক্ষ আমাদের গাড়ি চলাতে না করেছে, তাই আমরা গাড়ি চালাচ্ছি না। আমাদের দাবি তেলের দাম হয় কমানো হোক না হয় গাড়ি ভাড়া বাড়ানো হোক। তেলের যা দাম বেড়েছে তা দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে না ।
তিনি বলেন, বন্দর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পণ্য নিয়ে গাড়ি চলাচল করেছে। এরপর থেকেই পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা আশা করছি সরকার মালিকপক্ষের সঙ্গে বসে এ সমস্যার সমাধান করবে।
পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও নগরীতে চলছে অল্প গণপরিবহন
চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও নগরীতে অল্প পরিমাণে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।
সকালে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ী, লালখান বাজার, ওয়াসা এলাকায় ঘুরে অল্প পরিমাণে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।
এদিকে নগরীর কদমতলী, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সবধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চট্টগ্রাম নগরী থেকে বিভিন্ন উপজেলায় ও জেলায় যাওয়া যাত্রীরা। বিভিন্ন প্রয়োজনে যারা ঘরে থেকে বের হয়েছেন তাদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশা কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
চট্টগ্রামের কদমতলী মোড়ে কথা হয় আজহারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। রাতে খবর আসে আম্মা খুব অসুস্থ। এখন পরিবার নিয়ে যেতে চাচ্ছি কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। আর প্রাইভেটকারে অনেক ভাড়া চাচ্ছে। হঠাৎ করে গাড়ি বন্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
রকিবুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে দুই নম্বর গেইটে একটি বাস পেয়েছি। হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হওয়ায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। তবে গাড়ির হেলপার কোনো বাড়তি ভাড়া চায়নি। বলেছে সামনে বাস ভাড়া বাড়বে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখব। হঠাৎ ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে মালিকরা ক্ষুব্ধ। তেলের দাম বাড়ানো হলেও বাস ভাড়া বাড়েনি। তেলের দাম কমানো হোক অথবা বাস ভাড়া বাড়ানো হোক।
নগরীতে গাড়ি চলাচলের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে ১০ শতাংশের মতো গাড়ি গ্যাসে চলাচল করে। তারা হয়ত গাড়ি চালাচ্ছে। তবে কেউ গাড়ি চলাতে চাইলে আমরা বাধা দিচ্ছি না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকার কারণে কিছু কিছু মালিক গাড়ি চালাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (৩ নভেম্বর) রাতে জ্বালানি তেলের দাম ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এরপরেই বৃহস্পতিবার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান মালিকরা।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে থাকায় ‘লোকসান কমাতে’ দেশের বাজারেও এ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
কেএম/আইএসএইচ