ডিজেল-কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে জনজীবনে
নিত্যপণ্যের চরম মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই দুই জ্বালানি তেলের নতুন দর হবে লিটারপ্রতি ৮০ টাকা, যা এত দিন ৬৫ টাকা ছিল। এতে করে পরিবহন ও কৃষি ব্যয় বাড়বে, প্রভাব পড়বে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর ওপর। সবমিলিয়ে সাধারণ মানুষের খরচের খাত নিশ্চিতভাবে বাড়বে।
এ দিকে দেশে বাস-ট্রাকসহ পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করা হয়। দাম বাড়ায় গণপরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গণপরিবহনের পাশাপাশি সব ধরনের পণ্য পরিবহন খরচও বেড়ে যাবে।
বুধবার রাতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জারি করা স্মারকমূলে বিভিন্ন প্রকারের পেট্রোলিয়াম পণ্যের মধ্যে শুধুমাত্র ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য সংশোধন করা হলো।
ডিজেল-কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করে সাধারণ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে এলপিজির মূল্যবৃদ্ধি নাগরিক জীবনযাত্রায় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে ডিজেল-কেরোসিনের প্রতি লিটারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি, কৃষিকাজ ও গণপরিবহনে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। গণপরিবহন মালিকরাও ভাড়া বাড়াবেন। পণ্যপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের এবার লাগাম ছিঁড়বে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি প্রস্তাব আনা হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এভাবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেলে সব চাপ গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবন যখন অতিষ্ঠ, ঠিক সেই মুহূর্তে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি আত্মঘাতী ও জনবিরোধী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ন্যাপ। দলটির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গনি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা এই জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত জনবিরোধী। এমনিতেই নিত্যপণ্য ঊর্ধ্বমূল্যে কিনতে হচ্ছে। এই অবস্থায় ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে মারাত্মক চাপে ফেলবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত ‘মড়ার ওপর অনেকটা খাঁড়ার ঘা’র মতো।
রাজধানীতে চলাচল করা রাইদা পরিবহনের চালক নাছের হোসেন বলেন, তেলের দাম বাড়লে গাড়ির ভাড়াও বাড়বে। বেশি দামে তেল কিনে যাত্রীদের তো কম ভাড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায় না। তেলের দাম বাড়লে ভাড়াও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। মালিক সমিতি বসে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানালে আমরাও বাড়তি ভাড়া আদায় করব।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে শোধিত এবং সরাসরি আমদানি/ক্রয়কৃত ডিজেল ও কেরোসিন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর কাছে নতুন মূল্যে সরবরাহ করবে। ডিজেলের কর-উত্তর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ টাকা ৪৪ পয়সা। কেরোসিনের কর-উত্তর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ টাকা ৪৯ পয়সা।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২০০৮ সালের ২২ ডিসেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপন ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংশোধনীসহ অন্য সব বিষয় অপরিবর্তিত থাকবে। বিস্তারিত সমন্বিত মূল্য হার ৩ নভেম্বর রাত ১১টার পর অর্থাৎ ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। সমন্বিত মূল্য কাঠামো অনুযায়ী ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের ভেতর খুচরা পর্যায়ে ডিজেল-কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম পড়বে ৮০ টাকা।
দেশে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। এতে লিটার প্রতি ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয়কে জানায় বিপিসি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে বিপিসির বিপণন লোকসানের মুখে পড়েছে। প্রতিদিন ডিজেল ও ফার্নেস তেল বিপণনে ২০ থেকে ২২ কোটি টাকার মতো লোকসান হচ্ছে। তেলের দাম আরও বাড়লে এ লোকসানটাও বাড়বে।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, চাহিদা পূরণে প্রতি বছর ৪০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। অকটেন আমদানি করা হয় এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টন। প্রায় সমান পরিমাণ পেট্রোল উৎপাদন করা হয় দেশীয় উৎস থেকে। আগে পেট্রোল ও অকটেন বিপণনে বিপিসির মুনাফা থাকলেও এখন তার বদলে লোকসান হচ্ছে বলে কর্মকর্তাদের ভাষ্য। সরকার সর্বশেষ ২০১৬ সালে যখন প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা ঠিক করে দিয়েছিল, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৪০ থেকে ৫০ ডলারের আশেপাশে।
এএসএস/ওএফ