ভুলেও দস্যুতায় ফিরবেন না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমি বাগেরহাটে এসেই শুনেছি, বিশ্বাস করিনি। শুনেছি কেউ কেউ আবার বিপথে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কষ্ট করছেন জানি, কিন্তু ভুলেও সে চেষ্টা পুনরায় করবেন না। যারা দুষ্কর্মের চিন্তা করছেন, তারা তা ভুলে যান। যদি কেউ আবারো বিপথে যান, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না। আমাদের বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড এখন খুবই চৌকস। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা এখন সক্ষম।
সোমবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের রামপালে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠান-২০২১ উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) ও অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় খোঁজ খবর রাখছেন সুন্দরবনে জলদস্যুতা ছেড়ে যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তারা এখন কেমন আছেন। তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে কি না তাও জানতে চেয়েছেন। আপনাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দাবি ছিল মামলা প্রত্যাহারের।
আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মামলার বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ধর্ষণ ও খুন ছাড়া সব মামলা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হবে। মামলার কাগজ নিয়ে আসেন। মামলা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালী থেকে সাতক্ষীরা-বাগেরহাট এলাকায় জলদস্যুর কারণে বাসায় থাকা যেত না, আটকে রাখা হতো, মুক্তিপণ দাবি করা হতো, ডাকাতি করা হতো, ডাকাতি কাজে জড়াতে বাধ্য করা হতো। মধু সংগ্রহকারীরাও রেহাই পেতো না। আজ সে চিত্র বদলেছে। সবকিছুর সমাধান হয়েছে। সুন্দরবন আজ দস্যুমুক্ত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প করার জোর প্রচেষ্টা চলছে। জলদস্যুরা যদি কেউ মনে করেন আবারও জলদস্যুতা করবেন, সে স্বপ্ন যেন ভেঙে যায়। খুলনার মেয়র বলেছেন, মোংলা পোর্ট ও এর আশেপাশের এলাকায় আমদানি করা পণ্য খোয়া যাচ্ছে। এখানকার কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। খুলনা কোস্টগার্ড বিষয়টি দেখবে। প্রয়োজনে নৌ পুলিশের ডিআইজি আছেন, তিনিও দেখবেন। কিন্তু আমরা নদীতে কিংবা উপকূলে কোথাও আর কোনো ডাকাতির ঘটনা দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, এখানেই শুধু নয়, পাবনায় ৬০১ জন চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করেছে, কক্সবাজারে ১০১ জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছে। এর সবই হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায়। প্রধানমন্ত্রী শুধু আজ আমাদের নেতা নন, আজ তিনি বিশ্বনেতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর সব স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু সেখানেও ষড়যন্ত্র চলছে। যারা মনে করেন, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে বা বিভিন্ন ধরনের বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি করে অরাজকতার দিকে নিয়ে যাবেন, সফল হবেন, সে আশায় গুড়েবালি। সেটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া হবে না। জঙ্গি-সন্ত্রাসের মতো, মাদকের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন।
যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের জীবিকায় অনিশ্চয়তা ছিল জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের নিশ্চিত জীবিকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আত্মসমর্পণকারী ৩২৮ জন জলদস্যুকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১০২টি ঘর, জিনিসপত্রসহ মুদি দোকান ৯০টি, জাল ও মাছ ধরা নৌকা ১২টি, ইঞ্জিন চালিত নৌকা দেওয়া হয়েছে ৮টি। আর বাছুরসহ গবাদি পশু দেওয়া হয়েছে ২২৮টি।
আমরা আমাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে চাই। আমি বিশ্বাস করতে চাই, আপনারা আর ভিন্ন চিন্তা করবেন না। ভাববেন না, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বল, তারা কিছু জানবে না। আমি বিশ্বাস করি, এই এলাকার সবাই মিলেমিশে থাকবেন, বিপদে-আপদে পাশে থাকবেন। এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু এমপি, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. হাবিবুর রহমান এমপি ও পীর ফজলুর রহমান এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ।
জেইউ/জেডএস/জেএস