প্রস্তুত সুরক্ষা অ্যাপ: নিবন্ধন করবেন যেভাবে
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ বানানোর কাজ শেষ হয়েছে। টিকা পেতে আগ্রহী সবাইকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। তবে তার আগে তালিকা ঠিক করতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের তালিকা চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে অ্যাপ ও নিবন্ধনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ১৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। মোবাইল অ্যাপ চালু হওয়ার পর তালিকা অনুযায়ী নিবন্ধন করা হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইসিটি বিভাগ অ্যাপ প্রস্তুত করেছে। তারা জানিয়েছে, আজ অ্যাপটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী অফিসে অ্যাপটি হস্তান্তর করা হবে।
নিবন্ধন করবেন যেভাবে
গত ২১ জানুয়ারি রাতে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মটি হবে একটি ওয়েব অ্যাপলিকেশন। এটি www.surokkha.gov.bd ঠিকানায় থাকবে। এটি হোস্ট করা হবে দেশের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারে। ফলে যতজন এটাতে নিবন্ধন করতে চাইবেন, সেভাবে এর সক্ষমতা বাড়ানো যাবে। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন টিকা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই অ্যাপে দেশের নাগরিকদের ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। স্মার্টফোনেও অ্যাপলিকেশনটি ব্যবহার করে টিকার জন্য নাম নিবন্ধন করা যাবে।
তিনি জানান, ওয়েব অ্যাপে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের নিবন্ধন করা যাবে। ফলে কোনও ধরনের সমস্যা ছাড়াই নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।
আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম জানান, যেহেতু অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি তাই ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকার জন্য নিবন্ধন করা হবে না। পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপ্লিকেশনে ১৮টি শ্রেণি করা হয়েছে, যার একটি সিলেক্ট করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে। এই ১৮টি শ্রেণির মধ্যে রয়েছে নাগরিক নিবন্ধন, সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী; অনুমোদিত সকল বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারী; প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা কর্মকর্তা-কর্মচারী; বীর মুক্তিযোদ্ধা; সম্মুখসারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য; সামরিক ও আধা সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মীরা।
এছাড়া রয়েছেন সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী; নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী; ধর্মীর প্রতিনিধি (সকল ধর্ম); মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি; বিদ্যৎ, পানি, গ্যাস, পয়ঃনিস্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের মত জরুরি সেবার সম্মুখসারির কর্মী; রেল স্টেশন, বিমান বন্দর ও নৌ বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী; জেলা ও উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংক কর্মী ও প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক।
জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই করে সব ঠিক থাকলে স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে। সেখানে একটি ঘরে একটি মোবাইল ফোন নম্বর চাওয়া হবে, যে নম্বরে তাকে পরে টিকাদান সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করা হবে।
মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর একটি ঘর পূরণ করতে হবে, যেখানে জানাতে হবে নিবন্ধনকারীর দীর্ঘমেয়াদী রোগ বা কো মরবিডিটি আছে কি না, থাকলে কোন কোন রোগ আছে। সেখানে আরেকটি ঘরে জানাতে হবে পেশা এবং তিনি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কাজে সরাসরি জড়িত কি না।
তারপর বর্তমান ঠিকানা ও কোন কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে ইচ্ছুক তা সিলেক্ট করতে হবে। সব শেষে ফরম সেইভ করলে নিবন্ধনকারীর দেওয়া মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে ওটিপি। সেই ওটিপি কোড দিয়ে ‘স্ট্যাটাস যাচাই’ বাটনে ক্লিক করলে নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে।
নিবন্ধন হয়ে গেলে টিকার প্রথম ডোজের তারিখ ও কেন্দ্রের নাম এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ দিয়ে লগ ইন করে এসএমএস এর মাধ্যমে পাওয়া ওটিপি কোড দিয়ে টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে হবে।
এসএমএস এ যে তারিখ দেওয়া হবে, সেই তারিখে টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কোভিড-১৯ এর টিকা নিতে পারবেন নিবন্ধনকারীরা।
২৭ জানুয়ারি শুরু টিকা কার্যক্রম শুরু
২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনা টিকা দেওয়া হবে একজন নার্সকে। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৮ জানুয়ারি ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে এবং তারপর ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা দেওয়া হবে। সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ জনের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হবে। তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখার পর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে।
অ্যাপ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামারদের একটি দল নিজস্ব উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ সফটওয়্যারটি প্রস্তুত করেছে। প্রস্তুত করা সুরক্ষা সফটওয়্যারটি সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় ছাড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সরবরাহ করা হচ্ছে। নাগরিক নিবন্ধন ও টিকাদানসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সুরক্ষা সফটওয়ারটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ব্যবহার করতে পারবে। এই সিস্টেমটির উন্নয়ন এবং পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিভাগ, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), এটুআই এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
‘সুরক্ষা’ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. সেলফ রেজিস্ট্রেশন এর মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন ও ভ্যাক্সিন কার্ড ডাউনলোডের ব্যবস্থা রয়েছে।
২. টিকা গ্রহণ ও প্রদানের তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে যাচাই ও মনিটরিং করা যাবে।
৩. টিকার দুইটি ডোজ সম্পন্ন হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুরক্ষা সিস্টেম হতে অনলাইনের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।
৪. জাতীয় পরিচয়পত্রের গেটওয়ে ‘পরিচয়’ এর মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তির পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হবে।
৫. নিরাপদ নিবন্ধন নিশ্চিতকল্পে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তির মোবাইল নম্বরে OTP বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড প্রেরনের ব্যবস্থা রয়েছে।
৬. SMS এর মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিকে টিকা প্রদানের তারিখ ও তথ্য প্রদান করা যাবে।
৭. নাগরিকের টিকা ডোজ গ্রহণ সম্পর্কিত তথ্য QR code scan এর মাধ্যমে নেওয়া এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে।
৮. টিকা প্রদান সম্পর্কিত বিভিন্ন তালিকা, পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন প্রস্তুতের ব্যবস্থা আছে।
৯. জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।
যেভাবে ‘সুরক্ষা’ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাজ করবে
১. www.surokkha.gov.bd ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করতে হবে।
২. ‘নিবন্ধন’ বাটনে ক্লিক করে নাগরিক শ্রেণী সিলেক্ট পূর্বক জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। তারপর যাচাই বাটনে ক্লিক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয় যথাযথ হলে বাংলা ও ইংরেজিতে নাম ফর্মে দেখা যাবে। দীর্ঘমেয়াদী রোগ, কোমরবিডি আছে কিনা হ্যাঁ অথবা না সিলেক্ট করতে হবে।
৩. নিবন্ধনকারী নাগরিকের পেশা এবং সরাসরি কোভিড-১৯ কাজের সাথে জড়িত কিনা তা নির্বাচন করতে হবে।
৪. যে মোবাইলে টিকার তথ্য ও ভেরিফিকেশন এসএমএস পেতে চান তা নিবন্ধনের সময় দিতে হবে।
৫. ফর্মে বর্তমান ঠিকানা ও টিকা কেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে।
৬. সব শেষে মোবাইলে প্রাপ্ত OTP দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
৭. নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে গেলে ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
৮. নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে নির্ধারিত সময়ে এমএমএস এর মাধ্যমে টিকা গ্রহনের তারিখ ও কেন্দ্র জানানো হবে।
৯. টিকা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রিন্টেড টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি সাথে নিতে হবে।
টিআই/এসআরএস