প্রত্যেক এলাকায় নেতাকর্মীদের নজরদারি বাড়াতে হবে
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রত্যেক এলাকায় এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীদের নজরদারি বাড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নবনির্মিত কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, শান্তি-সম্মেলন, শান্তি-মিছিল, শান্তি-সভা করতে হবে—সম্প্রীতির ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন কোনো রকমের সংঘাত দেখা না দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মাটিতে প্রত্যেকটা ধর্মের মানুষ—সে মুসলমান হোক, খ্রিস্টান হোক, হিন্দু হোক, বৌদ্ধ হোক সবাই যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে। মানুষকে মানুষ হিসেবে আমি দেখি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখতে হবে। আর সেভাবে মানুষের সেবা করতে হবে।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় ঘটে যাওয়ার ঘটনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কুমিল্লার ঘটনাটা বিশ্লেষণ করি, আমরা সেটাই দেখবো। অন্যের ধর্ম অসম্মান করতে গিয়ে আমাদের পবিত্র কোরআন শরিফকেই অবমাননা করেছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখজনক। যার যার নিজের ধর্মের সম্মান নিজেকে রক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কুমিল্লায় যে ঘটনাটা ঘটে গেছে। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। মানবধর্মকে সম্মান করা ইসলামের শিক্ষা। নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সবার আছে, অন্যের ধর্মকে কেউ হেয় করতে পারে না। এটা ইসলাম শিক্ষা দেয় না। নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়। অন্যের ধর্মকে হেয় করা হলে নিজের ধর্মকেই অসম্মান করা হয়।’
সরকার অপরাধীদের বিচার করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না। কেউ যদি অপরাধ করে, সে যেই হোক তার বিচার হবে। আমাদের সরকার সেই বিচার করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নবী বলেছেন- ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবে না। আমাদের সবার সে কথাটা মেনে চলতে হবে। সে কথাটা স্মরণ করতে হবে। তাহলে আমরা ইসলামের সঠিক শিক্ষাটা পাব। প্রত্যেক ধর্মই শান্তির কথা বলে। সবাই শান্তি চায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজে বসবাস করি। সেখানে সবার ধর্মের সঙ্গে আমাদের সম্প্রীতি থাকবে। সম্প্রীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। যুগ যুগ ধরেই কিন্তু সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে আসছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছেন সেখানে কিন্তু ধর্ম দেখে না। সব ধর্মের মানুষের রক্ত একাকার হয়ে মিশে গেছে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে—বাংলাদেশ সব ধর্মের, সব বর্ণের।’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনার পরে সঙ্গে সঙ্গে পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা ঘটেছে। যাদের ঘরবাড়ি পুড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তাঁবু করে তাদের থাকার ব্যবস্থা, প্রথমে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা, রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। তাদের কাপড়চোপড় সব রকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাদের এভাবে ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেবো। ইতোমধ্যে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই এভাবে মানুষের ওপর নির্যাতন হয় আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে থাকে। বিএনপি-জামায়াত তাদের কাজই হলো ধ্বংস করা।
সরকার প্রধান বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমরা উন্নয়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে দেশটা যখন উন্নত হচ্ছে। কিন্তু একটা শ্রেণি আছে, তারা এটা কখনো মানতে পারে না। তাদের কাছে এটা পছন্দই না। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মান নিয়ে চলবে, এটা বোধ হয় এদের পছন্দই হয় না। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত এদের তো হবেই না। কারণ খালেদা জিয়ার নিজেরে অন্তরেই সব সময় ছিল পেয়ারে পাকিস্তান। সে তো সবসময় পেয়ারে পাকিস্তান নিয়েই থাকতো। এটা হলো বাস্তব কথা।’
আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা এমন একটা শিক্ষা দিল—যতই সম্পদ হোক, এই সম্পদ কিছুই না। মানুষ জন্মালে মরতে হবে আর মরলে সবকিছু পড়ে থাকবে। শুধু শুধু এই সম্পদের জন্য কাড়াকাড়ি করে নিজের সম্মান, পরিবারের সম্মান নষ্ট করা। মানুষের জীবনটা সুন্দরভাবে চলার জন্য যেটুকু দরকার, সেটুকু থাকলেই যথেষ্ট।’
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধন করে দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, ‘যেহেতু এটা কুমিল্লা শহরে, মহানগর অফিস বললে হবে না। এটাকে কুমিল্লা আওয়ামী লীগ অফিসই বলতে হবে।’
কুমিল্লা প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এইউএ/এমএইচএস