চূড়ান্তের পথে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নীতিমালা
ওটিটি (ওভার দ্যা টপ) প্ল্যাটফর্ম যাতে নিয়ম-নীতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, সে লক্ষ্যে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে নীতিমালার প্রাথমিক খসড়া সম্পন্ন হয়েছে। শিগগির এটি চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওটিটি প্লাটফর্মে দর্শকরা বাড়িতে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। এই প্লাটফর্ম বর্তমানে বিনোদনে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
দেশীয় ওটিটির পাশাপাশি বিদেশি ওটিটি প্লাটফর্মও দেশে চলছে। নীতিমালা চূড়ান্ত করার মাধ্যমে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, হইচই, বঙ্গবিডিসহ ভার্চুয়াল এ প্ল্যাটফর্মকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চায় সরকার।
তবে নীতিমালায় কী কী থাকছে তা এখনই বলতে নারাজ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, খসড়া হলেও নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রে তা পরিবর্তন হয়। তাই চূড়ান্ত হওয়ার আগে তা প্রকাশ করলে বিভ্রান্তির সুযোগ থাকে।
জানা গেছে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম তদারকির জন্য ২০২০ সালে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। খসড়া তৈরির জন্য ওই বছরের ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজান উল আলমকে সভাপতি করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
জানতে চাইলে মিজান উল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মুহূর্তে নীতিমালা তৈরির দায়িত্বে আমি নেই। তবে দায়িত্বে থাকাকালীন এ নীতিমালার বেশিরভাগ কাজ করেছি। চেষ্টা করেছি, যাতে একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা হয়।
নীতিমালা তৈরির সঙ্গে যুক্ত আছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার) খাদিজা বেগম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নীতিমালা মোটামুটি তৈরি হয়েছে, তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, একটি নীতিমালা করতে অনেকগুলো ধাপ অনুসরণ করতে হয়। অনেক ধরনের পরামর্শ নিতে হয়। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে, বিভিন্ন নিয়ম-কানুন পর্যালোচনা করেই নীতিমালা তৈরি করতে হয়। চূড়ান্ত হওয়ার আগে দেখা যায়, সংশোধনের জন্য মতামত আসে। তখন সেগুলো সংশোধন করতে হয়। আমরা সবকিছু মাথায় নিয়ে নীতিমালা চূড়ান্তের জন্য কাজ করছি।
কবে নাগাদ এটি চূড়ান্ত করা হবে- জানতে চাইলে খাদিজা বেগম বলেন, এটি এখনই বলা যাচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব নীতিমালা যাতে চূড়ান্ত করা যায়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
দেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এ প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত কনটেন্ট একদিকে যেমন প্রশংসা পাচ্ছে, অন্যদিকে কিছু কনটেন্ট নিয়ে সমালোচনাও আছে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে নীতিমালার প্রাথমিক খসড়া তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর খুব দ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে।
তিনি বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম একটি ক্রমবর্ধমান বাস্তবতা। কিন্তু এতে সিনেমা, নাটক, ওয়েব সিরিজ বা কোনো কন্টেন্ট রিলিজ করতে হলে অনুমোদনের ব্যবস্থা নেই। বছরে ৫০ বা ১০০টি সিনেমা রিলিজ হয়, সেটি সেন্সর করা সহজ। কিন্তু ওটিটির হাজার-হাজার কন্টেন্ট সেন্সর করা সহজ কাজ নয়। তবে নীতিমালা পাস হলে প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হবে। কোনো ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সমাজ ও মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে, বিজাতীয় সংস্কৃতি উৎসাহিত হয় কিংবা দেশের তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারে, এমন কন্টেন্ট ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ না করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
এদিকে, এ প্ল্যাটফর্ম থেকে অশ্লীলতা রোধ ও রাজস্ব আদায় সংক্রান্তসহ কয়েকটি ইস্যুতে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। দুটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সম্প্রতি আট সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে, বিটিআরসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার থেকে দুটি প্রতিবেদন দেওয়া হয় হাইকোর্টে। বিটিআরসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে তাদের কোনো রাজস্ব আদায় হয় না। কোনো ধরনের রেগুলেশন না থাকায় সেটি আদায় হচ্ছে না।
আর সাইবার পুলিশ সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পর্নোগ্রাফি আইন থাকলেও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে অশ্লীলতারোধে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। ফলে সবসময় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। যদি এ ধরনের একটি নীতিমালা হয়, তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সুবিধা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার) খাদিজা বেগম জানান, চূড়ান্ত হতে যাওয়া নীতিমালায় অশ্লীলতা রোধের বিষয়টিও থাকবে।
এসএইচআর/ওএফ