দুই-একদিনের মধ্যেই আসছে আরও ৫০ লাখ টিকা : পাপন
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তির ৫০ লাখ ডোজ করোনা টিকার প্রথম চালান দুই-একদিনের মধ্যেই আসছে বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে ২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা এসেছে, এগুলো বাংলাদেশের জন্য ভারত সরকারের উপহার।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে উদয়াচল পার্কের উদ্বোধন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বনাম ভারতীয় হাই কমিশনের প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকা পেতে আমাদের যে চুক্তি রয়েছে এটি পর্যায়ক্রমে নিয়ে আসা হবে। দুই-একদিনের মধ্যে প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ আসছে।
দেশে প্রথম টিকা নেবেন নার্স, উদ্বোধন ২৭ জানুয়ারি
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনার টিকা প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে একজন নার্সকে। এছাড়া এদিন আরও ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওইদিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে টিকাদান শুরু হবে জানিয়ে আবদুল মান্নান বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা দেওয়া হবে। (সেখানে) ৪০০ থেকে ৫০০ জনের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হবে। প্রথম দিনে টিকা প্রাপ্তদের তালিকায় করোনাভাইরাসের সময় কাজ করা সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সারাদেশে ৮ ফেব্রুয়ারি টিকা দেওয়া শুরু
২৭ জানুয়ারি ঢাকায় টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে সারাদেশে একযোগে টিকাদান। সংক্রমণের হার ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় সারাদেশের কোন জেলায় কত সংখ্যক ভ্যাকসিন যাবে তা নির্দিষ্ট করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেছেন, ৫০ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলাতেই প্রথম ধাপে পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়া হবে। তবে ঢাকা জেলার জন্য রাখা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় বরাদ্দ রয়েছে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ ডোজ। সবচেয়ে কম বরাদ্দ বান্দরবন জেলায়। জেলাটিতে ৪০ হাজার ৪৩৯ ডোজ টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে টিকা দেওয়া হবে ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৫ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে দেওয়া হবে ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ জনকে, রাজশাহী বিভাগে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ জনকে, রংপুর বিভাগে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯ জনকে, খুলনা বিভাগে দেওয়া হবে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৬ জনকে, সিলেট বিভাগে দেওয়া হবে ১০ লাখ ৩২ হাজার জনকে এবং বরিশাল বিভাগে আট লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। তিন রাউন্ডে এ জনগোষ্ঠী টিকা পাবেন।
মোহাম্মদপুরে উদয়াচল পার্কের উদ্বোধন
উদ্বোধন হওয়া মাঠের প্রসঙ্গ টেনে তিনি পাপন বলেন, বর্তমান প্রজন্ম ঘরমুখী হয়ে পড়েছে। দিনভর কম্পিউটার-মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের সামাজিক বন্ধন নেই। কেউ কাউকে চিনে না, জানে না। ঘরমুখো পরিবেশ থেকে তরুণ প্রজন্মকে বেরিয়ে আসতে হবে। খেলাধুলার মাধ্যমে সুস্থ জীবন যাপন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডে ২৪টি মাঠ এবং পার্কের উন্নয়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি মাঠ আন্তর্জাতিক মানের তৈরি করা হবে। এসব মাঠে বৃষ্টির পানি জমবে না। মাঠের ভেতর ব্যায়ামাগারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও থাকবে। এ ১০টি মাঠ আধুনিকায়ন করার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তখন তারা এসব মাঠের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার পথ শিশু ও মহল্লায় লোকজন যেনো মাঠে খেলতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে।
একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, একটি আদর্শ নগরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেখানে নাগরিকের জন্য পার্ক-মাঠসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ডিএনসিসি তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান, স্থপতি ইকবাল হাবিবসহ ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এএসএস/টিআই/এমএইচএস