২ মাস ধরে বন্দরের বহির্নোঙরে নিম্নমানের চালবোঝাই জাহাজ
নিম্নমানের চাল থাকায় খালাস না করে ফিরিয়ে দেওয়া জাহাজ ‘এমভি ড্রাগন’ দুই মাস ধরে অবস্থান করছে চট্টগ্রাম বন্দরে বহিনোঙরে। খাদ্য অধিদফতরের জন্য ১৯ হাজার ২০০ টন সেদ্ধ চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল ভারতীয় এ জাহাজটি।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা খালাসের জন্য চালের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করান। পরীক্ষায় চালের গুণগতমান ভালো বলে প্রতিবেদন দেওয়ার পর খালাস শুরু হয়। জাহাজ থেকে ৩ হাজার ২০০ টন চাল খালাস করে এলএসডিতে পাঠানো হয়। এরপর দেখা যায় জাহাজটিতে নিম্নমানের চাল আছে। পরে আবার নতুন করে চালের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় চালের নিম্নমান আসায় বাকি ১৬ হাজার টন চাল গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় খাদ্য বিভাগ।
গত ৫ আগস্ট চাল খালাস না করে বন্দর জেটি থেকে জাহাজটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দুই মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও জাহাজটি চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। এজন্য ভাড়াও গুনছে লাখ লাখ টাকা। চালগুলো সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খাদ্য বিভাগের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক দফতরের চট্টগ্রামের প্রধান আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এমভি ড্রাগনের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করার বিষয়টি আমরা জানি। সরকারিভাবে জি-টু-জি ভিত্তিতে ভারত থেকে একাধিক সরবরাহকারী চাল আনছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত থেকে ১৯ হাজার ২০০ টন সেদ্ধ চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে এমভি ড্রাগন। জাহাজটি থেকে তিন হাজার ২০০ টন চাল নামানোর পর নিম্নমানের চাল দেখতে পাওয়ার চাল খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে নিম্নমানের চাল দেওয়ায় খালাস বন্ধ করে জেটি থেকে জাহাজ বের করে দেওয়া হয়েছে। তখন চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চেয়েছিল চাল বাছাই করে নামানোর জন্য। কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। আমরা তাদের বলেছি তোমাদেরকে ভালো চালের জন্য আমরা টাকা দিয়েছি। টাকা দিয়ে এ ধরনের চাল আমরা নেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য অধিদফতর তাদের নিয়ে আসা চাল খালাসের অনুমতি বাতিল করেছে। এরপর তাদের এনওসি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা চালগুলো অন্য কোথাও রিশিপমেন্ট কিংবা বিক্রি করতে পারবে কাস্টমের প্রক্রিয়া শেষ করে।’
সফিউল আলম বলেন, ‘ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই জাহাজটি সেখানে অবস্থান করছে। হয়ত তারা এসব চাল বিক্রি করার জন্য এখনও কোনো ক্রেতা পায়নি। আমাদের সঙ্গে তাদের আর কোনো কাজ নেই। তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নেই।’
খাদ্য অধিদফতরকে চালগুলো আবার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে চট্টগ্রামের এ খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘তারা চেষ্টা করছে কি না আমার জানা নেই। তারা ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে তদবির করতে পারে। সে বিষয়ে আমার ধারণা নেই।’
অভিযোগ উঠেছে, চাল সরবরাহকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশি এজেন্ট নিম্নমানের এসব চাল যেকোনো কৌশলে সরকারি গুদামে প্রবেশ করাতে চায়। তাই মোটা অঙ্কের ভাড়া গুনে বহির্নোঙরে জাহাজটি দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে ‘এমভি ড্রাগন’ জাহাজের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ট্রাইটন শিপিংয়ের মালিক লিটন চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাহাজটি চাল নিয়ে এখন বন্দরের বহির্নোঙরে আছে। আদালতের মাধ্যমে রায় হলে তখন হয়ত চাল নামবে।’
চালগুলো কী সরকারকে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, আমি তো দেওয়ার কেউ না। আমি এজেন্ট। হয়ত একটা প্রসেসিং চলছে। চাল খালাস না হওয়ায় জাহাজ দীর্ঘদিন ধরে ডেমারেজ দিচ্ছে।
চালগুলো কী সরকারকেই দেওয়া হচ্ছে? জানতে চাইলে লিটন চক্রবর্তী বলেন, এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না। আমি তো স্থানীয় এজেন্ট মাত্র। বিভিন্ন প্রসেসিংয়ের মধ্যে আছে বলে জানতে পেরেছি। কীভাবে জাহাজটি ফ্রি করা যায় সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ফিক্স অপারেটিং কস্ট (এফওসি) বাবদ একটি জাহাজ অলস বসে থাকলে এক দিনে জাহাজের আকারভেদে ১০ হাজার ডলার থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত শিপিং ডেমারেজ বা জাহাজের ভাড়া গুনতে হয়।
জানা গেছে, সরকারিভাবে (জিটুজি) ভারত থেকে একাধিক সরবরাহকারী চাল সরবরাহ দিচ্ছে। এর মধ্যে ভারতীয় সরবরাহকারী ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (নাফেদ) থেকে এ চাল আসে। নাফেদ থেকে প্রথম চালানে কনটেইনারে করে ৫০০ টন চাল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। দ্বিতীয় চালানে ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দর থেকে এমভি ড্রাগন জাহাজে করে ১৯ হাজার ২০০ টন চাল চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে ২২ জুলাই। জাহাজ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সরকারি খাদ্য বিভাগের ল্যাবে পাঠানো হয়। প্রতিবেদন আসার পরই চট্টগ্রাম বন্দরের ১ নম্বর জেটিতে ভিড়িয়ে জাহাজ থেকে চাল খালাস শুরু হয়। সরকারি চাল থাকায় অগ্রাধিকার দিয়ে ৩১ জুলাই জাহাজটি জেটিতে ভেড়ার সুযোগ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ৩ হাজার ২০০ টন চাল খালাসের পর নিম্নমানের চাল পাওয়ায় চাল খালাস বন্ধ করে দেয় খাদ্য অধিদফতর।
কেএম/এসএসএইচ