টিকা দিতে বছরখানেক লাগতে পারে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
>> আমাদের দেশের মানুষ ভ্যাকসিন ভয় পায় না
>> বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভ্যাকসিন নতুন কিছু নয়
>> ট্রায়াল রানের মাধ্যমে ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘প্রাণঘাতী করোনার এই ভ্যাকসিন নিলেই যে করোনা সঙ্গে সঙ্গে দূর হয়ে যাবে, বিষয়টি এমন নয়। তাছাড়া ভ্যাকসিন দিতেও বছরখানেক লেগে যেতে পারে। এর মধ্যে আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা ইপিআই স্টোরে ভারত থেকে উপহার হিসেবে আসা মজুত ভ্যাকসিনের সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু কোনো ভ্যাকসিনকে ভয় পায় না। তারা বিভিন্ন ভ্যাকসিন নিয়ে অভ্যস্ত। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভ্যাকসিন নতুন কিছু নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি, এখানে একটি টেম্পারেচার (তাপমাত্রা) কক্ষের মতো গোডাউন রয়েছে। এই গোডাউনটি আমরা সরেজমিনে দেখলাম। সেখানে খুবই সুন্দরভাবে ভ্যাকসিনগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের বিষয়ে জাতীয় একটি প্ল্যান (পরিকল্পনা) হয়েছে। প্ল্যান অনুযায়ী এই ভ্যাকসিনগুলো দেওয়া হবে।’
প্রথমে ভ্যাকসিনগুলো কোথায় কোথায় যাবে, সেগুলো সব প্ল্যান করা আছে। আমরা একটি ট্রায়াল রানের (পরীক্ষামূলক) ব্যবস্থা করছি, তবে সেটির তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। খুব শিগগিরই একটি তারিখ আমরা পেয়ে যাব। সে অনুযায়ী আমরা ট্রায়াল রানে যাব। এরপর আমরা সারাদেশে এই ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
জাহিদ মালেক বলেন, ‘ট্রায়াল রানে আমরা সব ক্যাটাগরির (পর্যায়ের) ব্যক্তিদের রাখব। সেখানে চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, আর্মি, সাংবাদিক ও শিক্ষকরা থাকবেন। সেখানে বয়স্ক লোকেরাও থাকবেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে আরও ৫০ লাখ ডোজ করোনার ভ্যাকসিন আসার কথা রয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে সেটি দেশে চলে আসবে। সেগুলো এলে মোট ৭০ লাখ ডোজ আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেব।’
সাধারণ মানুষের মনে আস্থা আনতে অন্যান্য দেশের প্রধানরা শুরুতে ভ্যাকসিন নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের প্রধানরা কি শুরুতে নেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, এই ভ্যাকসিনটি যাদের বেশি প্রয়োজন আগে তাদের দেওয়ার জন্য। আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু কোনো ভ্যাকসিনকে ভয় পায় না। তারা বিভিন্ন ভ্যাকসিন নিয়ে অভ্যস্ত। প্রতিবছর কোটিরও অধিক ছেলে মেয়েদের ভ্যাকসিন দিয়ে থাকি। এ জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভ্যাকসিন নতুন কিছু নয়। কাজেই এই ভ্যাকসিন আমরা পর্যায়ক্রমে সকলকে দেয়া হবে।’
আমি বাংলাদেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আমি আশা করছি, বাংলাদেশ খুব দ্রুতই ভ্যাকসিনেশন শুরু করবে।
ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী
উল্লেখ্য, বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১২৩২ ফ্লাইটে ভারতের দেওয়া ভ্যাকসিনের ডোজগুলো বাংলাদেশে আসে। ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে ফ্লাইটটি মুম্বাই থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। বিমানবন্দর থেকে সেগুলো নেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। সেখানে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে এসব ভ্যাকসিন তুলে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘ভারতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর চারদিনের মাথায় বাংলাদেশে ২০ লাখ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে পাঠানো হলো। এটা ভারত সরকারের দেওয়া প্রথম এবং সবচেয়ে বড় চালান। ভারত বাংলাদেশকে প্রথম চালানের ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক যে অবস্থান তা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের গুরুত্বের কথা ভেবে মানুষের জন্য ভারত এসব উপহার দিয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আমি আশা করছি, বাংলাদেশ খুব দ্রুতই ভ্যাকসিনেশন শুরু করবে।’
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ নামে বাজারজাত করছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। গত শনিবার থেকে এ টিকা ভারতের মানুষকে দেওয়া শুরু হয়েছে। উপহারের বাইরে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিকভাবে তিন কোটি ডোজ পাওয়ার জন্য গত ৫ নভেম্বর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। চুক্তি অনুসারে প্রথম ধাপে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। এ মাসেই এর প্রথম চালান আসার কথা রয়েছে।
টিআই/এফআর