হাসুমণি’র পাঠশালার উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদযাপন
হাসুমণি’র পাঠশালার উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে হাসুমণি’র পাঠশালার চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও উদযাপিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জন্মোৎসব উপলক্ষে আয়োজিত ‘প্রসূন শ্রদ্ধা- শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ও গোলটেবিল আলোচনা’য় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, অধ্যাপক মুশফিক মান্নান চৌধুরী, বিটিভির অনুষ্ঠান ও পরিকল্পনা পরিচালক জগদীশ চন্দ্র এষ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন হাসুমণি’র পাঠশালার সভাপতি মারুফা আক্তার পপি।
মঙ্গলবার সকালে বেলুন ওড়ানো এবং মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে জন্মোৎসব শুরু হয়। উৎসবে ৭৫ ফুট ক্যানভাসে শতাধিক শিল্পী ছবি আঁকেন। উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শিত হয় শেখ হাসিনার বিভিন্ন বয়সকালের শিল্পীদের আঁকা বৈচিত্রময় পোর্টে্রট, সুই-সুতার কাজের পোর্টে্রট ও ভাষ্কর্য। ব্যতিক্রমী ফুলেল স্থাপনা প্রদর্শিত হয় পাবলিক লাইব্রেরির সিঁড়ি ধাপে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা বার্তা জানানোর জন্যে রাখা হয় শুভেচ্ছা দেওয়াল।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এসব শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন এবং মিষ্টিমুখ করে প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং হাসুমণি’র পাঠশালার সাফল্য কামনা করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে “শেখ হাসিনা: বাইগার নদীর তীরের রাজার মেয়ে” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
এতে মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো: মশিউর রহমান বলেন, বাঙালির ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ এবং বঙ্গবন্ধু যেমন অপরিহার্য নামে পরিণত হয়েছে, শেখ হাসিনা তেমনি এ প্রজন্মের কাছে আবশ্যক অনুকরণীয় রাজনীতিক রূপে বিবেচিত। তাঁর চিন্তার আধুনিকতা ও বিশ্বাস এবং ভরসার কর্মদক্ষতা এখন বিশ্বস্বীকৃত। বাঙালিকে নিষ্ঠার সঙ্গে ভালোবেসে তিনি মানুষের প্রাণে প্রাণে ঠাঁই করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত প্রান্তিক মানুষের কাছে শেখ হাসিনা আজ এক আস্থার নাম, বিশ্বাস ও ভরসার নাম। এই অর্জন শুধু রাজনীতিক শেখ হাসিনার পরিসর দিয়ে পরিমাপ করা যথার্থ হবে না। তিনি ব্যক্তিগত এক গভীর কমিটমেন্ট ধারণ করেন নিজের মধ্যে। তাকে খুঁজতে হবে তার ভেতরকার অনন্যসব গুণাবলী দিয়ে। তিনি সৎ, সত্যবাদী, কঠোর এবং কোমল। তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন, মানুষকে ভালোবাসেন হৃদয় দিয়ে, আর তার বার্তা পৌঁছে দেন একদম জীর্ণ কুটিরে থাকা মানুষটির মধ্যে। যাদের জীবন নিরাপদ ও উন্নত করার ব্যাপারে শেখ হাসিনার মধ্যে কাজ করে দুর্দমনীয় এক শক্তি। শেখ হাসিনা আজ বাঙালির কল্যাণ ও মুক্তির ঠিকানা। উন্নয়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কাণ্ডারি, তিনি অর্থনৈতিক মুক্তির আলোকবর্তিকা। তার হাতে প্রজ্জ্বলিত মশাল আজ ছুটছে আলোর বিচ্ছুরণ নিয়ে এক বিরামহীন গতিতে। সে কারণেই শেখ হাসিনা বিশ্বের কাছে বাঙালির মুক্তির দূত, তিনি ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার মন্ত্রে উজ্জীবিত। বিশ্ব রাজনীতিকের তালিকায় তার অবস্থান আজ সুদৃঢ় ও শক্ত ভীতে নির্মিত।
প্রধান আলোচক মো. আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, খুব মসৃণ পথ পাড়ি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনের ৭৫ বছর পার করেননি। কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে বিভিন্নভাবে সংগ্রাম করে জীবিত অবস্থায় আজকের এই অবস্থানে এসেছেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকার কারণে তিনি বেচেঁ গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে তিনি বেচেঁ গেছেন বলে, আজকে বাংলাদেশ নতুন স্বপ্ন দেখতে পারছে। এই করোনা ভাইরাসের অতিমারীতেও একজন মানুষও না খেয়ে মরেনি। আজকে শিশুদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং শতভাগ শিশুদের উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে সংগ্রাম প্রধানমন্ত্রী করে যাচ্ছেন, আমাদের সবাইকে এক হয়ে সেই সংগ্রামে তাকে সহযোগিতা করতে হবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশরত্ন শেখ হাসিনা কখনোই নিজের জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করেন না এবং করা হোক এটাও চান না। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে তার জন্য করি। তিনি তার ৭৫ বছরের জীবনের মধ্যে ৭৪ বছর কষ্টের মধ্যে কাটিয়েছেন। ৭১ বছর তিনি অনিশ্চয়তা ও আঘাতের মধ্যে কাটিয়েছেন। জন্ম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সংগ্রামের মধ্যে কাটিয়েছেন। তার জন্মের সময় তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর শৈশব কেটেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বাইগার নদীর তীরে, সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে সময় দিতে পারতেন না। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা তার শৈশব, কৈশোর, ছাত্রজীবন, সংগ্রাম, অনিশ্চয়তার মধ্যেই নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তিনি একজন সুযোগ্য সন্তান হিসেবে এদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির বিপ্লবকে সফলভাবে সম্পাদন করে একটি দরিদ্র, দুর্নীতিগ্রস্ত ও জঙ্গী-সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে মাত্র ১২ বছরের মধ্যে একটি দুর্নীতিমুক্ত, প্রযুক্তিনির্ভর, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং মর্যাদাশীল মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত করার মাধ্যমে পিতার যে সোনার বাংলা গড়ে তোলার অসমাপ্ত স্বপ্ন রয়েছে তা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন একের পর এক পূরণের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এবার জাতিসংঘের ৭৬তম সভায় জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৮তম বারের মতো বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন। বিশ্বের ইতিহাসে খুব কম রাষ্ট্রনায়কই আছেন যারা এতবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রেখেছেন। সেখানে তিনি এসডিজি বাস্তবায়নের জন্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, আবার এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতির জন্যে তিনি পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি ‘মানবতার মাতা’ হিসেবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের সব উন্নত রাষ্ট্রকে দেখিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ব মানবতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি তার পিতার মতোই শোষিত-বঞ্চিতদের পক্ষের কণ্ঠস্বর। দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্যে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত বিপ্লব এখন সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার স্নেহের হাসুমণি।
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন শুধু এদেশের জন্যেই নয়, বরং সারা পৃথিবীর জন্যে শুভদিন। তিনি তার জ্ঞান এবং পরিমিতি বোধ থেকে সারাবিশ্বে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মারুফা আক্তার পপি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে এই জাতি নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল। আমাদের সব হারানোর দুঃখের মাঝেও যিনি আমাদের আশার আলো দেখিয়েছেন, তিনি হলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সমস্ত কষ্টকে জয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে পথশিশু এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
এনএফ