ইভ্যালি নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল প্রতিযোগিতা কমিশন
এক বছর আগে স্বপ্রণোদিত হয়ে ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই সংস্থাটির পদক্ষেপেই ‘ঈদ ধামাকা’ অফারটি বন্ধ করেছিল ইভ্যালি।
তবে কমিশনের উদ্যোগ ও অন্তর্বর্তীকালীন ওই রায়ের সেভাবে প্রচারণা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম। পরিতাপ জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশনের ওই উদ্যোগের প্রচারণা হলে সাধারণ ক্রেতা এত বেশি প্রতারিত হতেন।
বিসিসি’র সংশ্লিষ্টরা জানান, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি ডটকম লিমিটেডের ওয়েবসাইটে ‘ঈদ ধামাকা’ নামে একটি গত বছরের ১২ আগস্ট প্রকাশিত হয়। এ অফারে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাশব্যাক অফার ছিল, যার পরিমাণ ৮০ শতাংশ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বাজারের তথ্য-প্রমাণে ইভ্যালির প্রতারণার ফাঁদ থেকে গ্রাহকদের অর্থ রক্ষার্থে ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে কমিশন। এই মামলার প্রেক্ষিতেই ইভ্যালি ‘ঈদ ধামাক’ অফার বন্ধ করেছিল। এছাড়া ইভ্যালির সকল অফার বন্ধ করতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন রায় দেয় প্রতিযোগিতা কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইভ্যালির ‘ঈদ ধামাকা’ অফারের ফলে বাজারে প্রতিযোগিতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। এই বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিসিসি-র উপপরিচালক (ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও গবেষণ) আনোয়ার-উল-হালিমকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে কমিশন। বর্তমানে তদন্তটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই ইভ্যালির মামলাটির চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে।
জানা যায়, ইভ্যালি ডটকম লিমিটেডের যে ‘ঈদ ধামাকা’ অফার নিয়ে কমিশন স্বপ্রণোদিতভাবে আনিত মামলার সূত্রপাত, সে অফারের শর্তাবলী অংশের ৪ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, ‘ঈদ ধামাকা’ ক্যাম্পেইনে পার্শিয়াল পেমেন্ট অ্যালাউড না, ফুল পেমেন্ট করতে হবে। ক্যাশব্যাক ইভ্যালি ব্যালেন্সে যোগ হবে পেমেন্ট করার তিন দিন পর। এই ক্যাশব্যাক পরবর্তীতে ইভ্যালিতে যেকোনো রেগুলার শপ থেকে কেনাকাটায় ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে পণ্যের ৬০ শতাংশ ব্যালান্স থেকে এবং ৪০ শতাংশ নিউ পেমেন্ট করতে হবে। ওই শর্তের কারণে ৮০-১৫০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফারে যে ক্রেতা আকৃষ্ট হয়ে ইভ্যালি থেকে পণ্য ক্রয় করবেন, তাকে ক্যাশব্যাক সুবিধা নিতে হলে আরেকটি পণ্য সেই পণ্যের মূল্যের ৪০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করে ক্রয় করতে হবে। প্রতিপক্ষ তার দাখিলকৃত লিখিত ‘ঈদ ধামাকা’ অফারের বিষয়টি একবারই অনলাইনে দিয়েছিল ও এর স্থায়িত্ব স্বল্প সময় ছিল। পরবর্তীতে আর এ ধরনের অফার দেওয়া হয়নি।
কমিশনের মামলার চিঠির বিষয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে ইভ্যালি জানায়, ১০০ শতাংশ ক্যাশব্যাক সুবিধা চালুর লক্ষ্যে তাদের টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে এবং গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কাজ সম্পন্ন হবে। তখন থেকে গ্রাহক ১০০ শতাংশ ক্যাশব্যাক ব্যালেন্স সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে। বর্তমানে তাদের আওতায় প্রায় ৪০ হাজার পণ্য আছে এবং তার মধ্যে ৫-৭ হাজার পণ্যে ক্যাশব্যাক সুবিধা চালু আছে। ১০০ শতাংশ ক্যাশব্যাক সুবিধা চালু না থাকলেও প্রতিটি পণ্যের উপর ১৫-২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক সুবিধা গ্রাহক ব্যবহার করছে। বর্তমানে ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা আনুমানিক ৪০ লাখ। প্রযুক্তিযুক্ত অফার বাতিল করতে হলে সফটওয়্যারের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ডিজাইন পরিবর্তন করতে হবে। যা প্রক্রিয়াধীন আছে। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এটা বাতিল করা হবে বলে কমিশনকে জানিয়েছিল ইভ্যালি।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ক্রেতা ঠকানোর অভিযোগ তুলে এক বছর আগে ইভ্যালির ধামাকা অফারের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিতভাবে মামলা করেছিলাম। শুধু মামলাই নয়, কমিশনে ডাকা হয়েছিল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে। পরবর্তীতে এই ধরনের অফার আর দেওয়া হয়নি। সাধারণ ক্রেতাদের সতর্ক করতে বিষয়টি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও এই বিষয়ে কোনো প্রচারণা হয়নি। কমিশনের মামলা বা পদক্ষেপের বিষয়ে সাধারণ জনগণ জানতে পারলে ক্রেতাদের ঠকার সংখ্যাটা আরও কম হতো।
চেয়ারপারসন আরও বলেন, ইভ্যালির ঈদ ধামাকা অফারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। এটা পরে বন্ধও করা হয়। ই-কমার্স ও ইভ্যালির কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণাদি চেয়ে আমরা আলাদা আলাদা চিঠিও দিয়েছি। আমরা নিজ উদ্যোগে বারবার তাদেরকে ক্রেতা ঠকানো অফারে বাধা দিয়েছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, কমিশনের পদক্ষেপগুলো সেভাবে প্রচার হয়নি। আমরা চাইলেই এটা প্রচারের জন্য সংবাদ সম্মেলন করতে পারি না। বিষয়টি প্রচার হলে এত মানুষ ফাঁদে পড়ত না।
এসআর/এইচকে