প্রেমের বিয়ের ৫ মাস না যেতেই লাশ হতে হলো লামিয়াকে
প্রেমের টানে স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন ১৯ বছরের লামিয়া। বিয়ে করেছিলেন কাঙ্ক্ষিত প্রেমিককে। তারপর সাবলেট বাসায় শুরু হলো টোনাটুনির সংসার। স্বামী হৃদয় গ্যারেজে গাড়ির পেইন্টিংয়ের কাজ করেন। আর হাস্যোজ্জ্বল লামিয়ার সময় কাটে টিকটক ভিডিও বানিয়ে। সুখের সংসারই বলতে হবে। কিন্তু পাঁচ মাস যেতে না যেতেই হঠাৎ তাদের বাসা থেকে ভেসে এলো পচা দুর্গন্ধ।
সেদিন লামিয়ার বোন মাকসুদা আক্তার গ্রাম থেকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় এসেছিলেন। একের পর এক ফোন করে লামিয়া-হৃদয়ের কাউকেই না পেয়ে ঢুঁ মারেন বাসায়। দেখেন বাসা তালাবদ্ধ। এরপর পুলিশ এসে দরজা ভাঙতেই দেখা গেল, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগানো লামিয়ার অর্ধগলিত মরদেহ ঝুলছে ফ্যানের সঙ্গে।
যেদিন লামিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ, সেদিন ছিল ২২ সেপ্টেম্বর। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লামিয়ার অর্ধগলিত মরদেহ যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে, তখন তার প্রেমিক থেকে জীবনসঙ্গী হওয়া হৃদয় লাপাত্তা। ফলে লামিয়ার বড় বোন মাকসুদা আক্তার বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে হৃদয় ফকিরের বিরুদ্ধে মামলা করেন (মামলা নম্বর ২৪)। হৃদয়কে এখন খুঁজছে পুলিশ।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রামপুরা থানা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
থানা পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রায় পাঁচ মাস আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রামপুরার একটি বাসায় সাবলেট ওঠে লামিয়া-হৃদয় ফকির। জামতলা পানির পাম্পের পাশের ওই বাড়ির নাম্বার ১৩৮/৪/৫/এ। এর চার তলায় ছিল লামিয়া-হৃদয়ের সংসার।
পুলিশ জানায়, ওই বাসা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে থানায় খবর দেয় স্থানীয়রা। ২২ সেপ্টেম্বর দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ঝুলন্ত অবস্থায় লামিয়ার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগী লামিয়ার পরিবার ও পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, হৃদয় ফকিরের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনিতে। তিনি রামপুরার বাসার পাশেই একটি গ্যারেজে গাড়ির পেইন্টিংয়ের কাজ করতেন। আর লামিয়া ছিলেন গৃহিণী। বিশেষ পড়াশোনা জানা না থাকলেও হাস্যোজ্জ্বল লামিয়া মোবাইলে টিকটিকে ভিডিও তৈরি করতেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের খোরখোলা গ্রামে। বাবার নাম শেখ মোমেদ।
মরদেহ উদ্ধার ও ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী রামপুরা থানার উপ-পরিদর্শক ইয়াকুব আলী জানান, ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ ছিল। দরজা ভেঙে ভেতর ঢুকে ওই তরুণীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দেহে পচন ধরায় ধারণা করা হচ্ছে, লাশ উদ্ধারের তিন থেকে চার দিন আগে তার মৃত্যু হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাসাটিতে স্বামী-স্ত্রী থাকতেন। তারা দুজনে একটি মোবাইল ব্যবহার করতেন। মরদেহের পাশেই সেটি পড়ে ছিল। খবর পেয়ে স্বজনরা বাসায় এসেছিলেন।
লামিয়ার বড় বোন মাকসুদা আক্তার বলেন, লামিয়ার প্রথম বিয়ে হয়েছিল পরিবারের ইচ্ছায়। নিজের ইচ্ছায় কয়েক মাস আগে হৃদয়কে বিয়ে করেছিল লামিয়া। তারপর রামপুরায় সংসার শুরু করে। ২১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে আমি ঢাকায় আসি। হৃদয় ও লামিয়ার মোবাইলে বারবার ফোন দেই। কিন্তু কেউ ধরে না। তাদের বাসায় গিয়ে দেখি সেটি তালাবদ্ধ। পরে অন্য এক স্বজনের বাসায় উঠি। পরে খবর পাই, বাসার ভেতরে আমার বোনের মরদেহ ঝুলছে। পুলিশ এসে উদ্ধার করেছে।
মাকসুদার অভিযোগ, হৃদয় তার বোনকে হত্যা করে ঘটনা ভিন্ন দিকে নিতে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে পালিয়েছে। তাকে গ্রেফতার করলেই সব রহস্য বের হবে।
তবে শনিবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, লামিয়া আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার পর ওই ফ্ল্যাট পরিদর্শন করে যেসব আলামত উদ্ধার করা হয়েছে তাতে আত্মহত্যার বিষয়টি স্পষ্ট। তাছাড়া ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।
তিন কারণে আত্মহত্যা করতে পারেন লামিয়া
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবারের দাবি লামিয়াকে হত্যার পর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে পালিয়েছে হৃদয়। আপাতত আমরা তদন্তে তিনটি কারণ অনুসন্ধান করে জেনেছি। এর প্রথম কারণটি হলো- লামিয়া ও হৃদয়ের বিয়ে পারিবারিকভাবে মেনে নেওয়া হয়নি।
দ্বিতীয়ত : যে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে লামিয়া হৃদয়কে বিয়ে করেছিলেন বাস্তবে তা হয়ত মেলেনি। হৃদয় একটি গ্যারেজে গাড়ির রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। সাংসারিক জীবনে তাদের অর্থনৈতিক টানাপড়েন ছিল।
তৃতীয়ত : লামিয়ার সঙ্গে হৃদয়ের সম্প্রতি মনোমালিন্য চলছিল।
ওসি জানান, যার বাসায় হৃদয়-লামিয়া সাবলেট উঠেছিলেন সেই শহিদুল ইসলামকেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ঘটনার কয়েকদিন আগে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান। সেখানে তাদের নবজাতকের জন্ম হয়।
তিনি বলেন, লামিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় শহিদুল ইসলামের কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশ। হৃদয়কে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পলাতক হৃদয় গ্রেফতার হলেই সব ধোঁয়াশা কাটবে।
জেইউ/এইচকে