প্রবাসীর ২৮ লাখ হাতিয়ে পুলিশের হাতে ধরা জিনের বাদশা
২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২ সহযোগীসহ এক ‘জিনের বাদশাহ’কে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার আলাদা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন।
তিনি বলেন, বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার হাজারি গলি থেকে আবু তৈয়ব (৫৮) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ থানার হোয়াইক্যং এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবদুল মান্নান (৫৮) ও জোবাইর হোসাইন (২৩) নামে আরও ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, কোতোয়ালি এলাকার বাসিন্দা মো. আবুল হাছান সহিদ দীর্ঘ ২২ বছর সৌদি-আরবে ছিলেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে আসেন তিনি। সৌদি আরবে দেশটির নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী নামে একজনের সঙ্গে হোটেলের ব্যবসা করতেন তিনি। সেই সৌদি নাগরিক পরিকল্পিতভাবে তার ব্যবসার সব টাকা আত্মসাৎ করে দেশটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
পুলিশ আরও জানায়, একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কোতোয়ালি থানার হাজারি গলির আবু তৈয়বের স্বর্ণের দোকানে স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রয় করতে যান সহিদ। এ সময় আবু তৈয়ব তার বিদেশে প্রতারিত হওয়ার তথ্য জেনে এর থেকে প্রতিকারের উপায় আছে বলে জানান। তৈয়ব সহিদকে আবদুল মান্নান নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মান্নান নিজেকে একজন পীর ও জিনের বাদশা বলে পরিচয় দেন।
আধ্যাত্মিক শক্তি ও জিনের মাধ্যমে প্রতারণাকারী সৌদি নাগরিককে বাংলাদেশে এনে দিতে পারবে বলে সহিদকে আশ্বাস দেন মান্নান। পরে আবদুল মান্নান নানা কৌশলে বিভিন্ন সময়ে সহিদের কাছ থেকে প্রায় ২৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
প্রতারণার বিষয়টি পরে টের পেয়ে সহিদ কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে কথিত জিনের বাদশাহ মান্নানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে।
ওসি বলেন, সহিদকে মান্নান কোতোয়ালি থানার লালদিঘী শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে কোরআন শরীফ স্পর্শ করে শপথ করান। তিনি বিষয়টি কারো কাছে বললে তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে এবং তার পালিত জিন সাহিদকে গলা টিপে হত্যা করবে। এমনকি তার সন্তানদের উপর বড় ধরনের বিপদ আসবে বলেও জানায়।
তিনি বলেন, আসামিরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তৈয়ব স্বর্ণের দোকানে চাকরি করেন। তিনি স্বর্ণ বিক্রয় করতে আসা বিভিন্ন কাস্টমারের সমস্যা শুনে তাদের মান্নানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মান্নান নিজেকে জিনের বাদশা বলে পরিচয় দেন এবং জিন লালন-পালন করেন বলে জানান। এভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় তারা।
কেএম/এসকেডি/জেএস