বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার জয় ম্লান হয়েছে ইউপি ভোট : ইসি মাহবুব
নির্বাচন যেহেতু অনেকের মধ্যে বাছাই, সেহেতু বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে নির্বাচিত হওয়া বলা যায় কি এমন প্রশ্ন তুলেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন সম্পর্কে আমার কথা’ শিরোনামে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে এমন প্রশ্ন রাখেন মাহবুব তালুকদার।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অন্য বারের চেয়ে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের টার্নআউট মোটামুটি ভালো ছিল। এবার গড়ে শতকরা ৬৯.৩৪ ভাগ ভোট পড়েছে। কিন্তু বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদে ৪৩ প্রার্থী নির্বাচন না করেই চেয়ারম্যান পদে অভিষিক্ত হয়েছেন। বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীরা এবারের ইউপি ভোট ম্লান করে দিয়েছেন। এছাড়া নয়টা পৌরসভায় তিনজন প্রার্থী বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
ইসি মাহবুব বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনে বহুদলের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের কারণ বিশ্লেষণ করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ অনিবার্য। ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতাও আমার কাছে গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত মনে হয়। এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা জড়িত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সার্বিকভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর (আজকে) পর্যন্ত ছয় দিনের জন্য আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) দায়িত্ব পালন করি। কয়েকজন সাংবাদিকে এই সময়ে অনুষ্ঠিত ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং নয়টি পৌরসভা নির্বাচনে আমার সাফল্য ও ব্যর্থতা জানতে চান। এমন সংক্ষিপ্ত সময়ে আকস্মিকভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। তারপরও কিছু কথা থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, এ নির্বাচনে তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি সব সময় বলে এসেছি জীবনের চেয়ে নির্বাচন বড় নয়। তবু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে সহিংসতা রোধ করা গেল না। নির্বাচনে ঘটনা বা দুর্ঘটনা যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনের ওপরই দায় এসে পড়ে। তবে নির্বাচনের সব দুর্ঘটনা অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা, অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারা, প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আমার দায়িত্ব-পালনকালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনানুগভাবে দায়িত্বপালনের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সব স্থানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, এর জন্য যারা দায়ী, প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের আটক করা হয়েছে। যারা অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরও আটক করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে আরও অনেককে আইনের আওতায় আনা হবে। সহিংসতা রোধে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি এবং হবে না। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে একজন সংসদ সদস্যকে সতর্কবার্তা পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে।
এসআর/এসএম