নামেই জরুরি প্রকল্প, ১ বছরে অগ্রগতি মাত্র ৪.৬৯ শতাংশ!
করোনা মহামারি মোকাবিলায় গত অর্থবছরে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমারজেন্সি অ্যাসিসটেন্স’ প্রকল্পটি অন্যতম। প্রকল্পটি গ্রহণের এক বছর অতিবাহিত হলেও অগ্রগতি মোটেই সন্তোষজনক নয়।
বিপুল পরিমাণ বরাদ্দের বিপরীতে মাত্র ৬৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থাটি। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতার কারণে বেশিরভাগ প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। প্রকল্প গ্রহণ করেই দায় সারছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়টি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৬৭৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বাকি টাকা ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ। কিন্তু মোট বরাদ্দের মাত্র ৬৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ থেকে ৬৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং সরকারি তহবিল থেকে মাত্র ৬ হাজার টাকা ব্যয় করতে পেরেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। প্রকল্পের অগ্রগতির হার মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় মাত্র ৪.৬৯ শতাংশ।
এদিকে গত মাসে (১৯ আগস্ট) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা অনুুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. হেলাল উদ্দিন। সভায় প্রকল্পটির অগ্রগতি নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৬৭৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বাকি টাকা ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ। কিন্তু মোট বরাদ্দের মাত্র ৬৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ থেকে ৬৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং সরকারি তহবিল থেকে মাত্র ৬ হাজার টাকা ব্যয় করতে পেরেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। প্রকল্পের অগ্রগতির হার মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় মাত্র ৪.৬৯ শতাংশ।
সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প পরিচালক সভায় জানান, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং জরুরি প্রস্তুতি ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারির সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১ হাজার ৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দেবে ৮৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং সরকারি তহবিল থেকে ৫১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
সভায় পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি জানান, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় অনুমোদিত প্রকল্পের সংস্থান এবং অব্যয়িত ব্যালেন্সের অতিরিক্ত কোনো কার্যক্রম গ্রহণ বা অর্থ ব্যয়ের প্রস্তাব করা যাবে না। আইএমইডির প্রতিনিধি বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখিত কম্পোনেন্টগুলো এ অর্থবছরে বাস্তবায়ন সম্ভব কি না সে বিষয়ে জানতে চান।
আইএমইডি জানায়, প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রস্তাব বাস্তবভিত্তিক হতে হবে, তা না হলে অর্থবছর শেষে এডিপি বরাদ্দের অর্থ অব্যয়িত থাকার সম্ভাবনা দেখা দেবে। এছাড়া প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রমের গতিশীলতা এবং প্রান্তিক পর্যায়ের সরবরাহের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ২৫টি পিসিআর মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। সেগুলো স্থাপনের জন্য সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। তবে কয়েক সেফটি কেবিনেট এখনো এসে পৌঁছায়নি। এছাড়া ৮টি এমসিএইচ এ ১০ শয্যার আইসিইউ এবং ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের পূর্ত কাজ, ৭টি স্থলবন্দরে মেডিকেল স্ক্রিনিং সেন্টার নির্মাণের অ্যাসেসমেন্ট করে নকশা প্রণয়নসহ টেস্টিং কিট এবং পিপিই সামগ্রী ক্রয় ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ প্রকল্পের কিছু কেনাকাটা সিএমএসডির মাধ্যমে করা হয়। সভাপতি গত অর্থবছরে সিএমএসডির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) করোনা টেস্টিং কিট ও পিপিই সামগ্রী ক্রয়ের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর অগ্রগতি জানতে চান। এর জবাবে আমরা জানিয়েছি, সিএমএসডির মোট ৯টি প্যাকেজের মধ্যে ২টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৬টি প্যাকেজের কার্যাদেশ শিগগিরই দেওয়া হবে। বাকি ১টি প্যাকেজের মাধ্যমে ৩০টি অক্সিজেন জেনারেটর ক্রয় প্রক্রিয়াধীন আছে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ২৫টি পিসিআর মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। সেগুলো স্থাপনের জন্য সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। তবে কয়েকটি সেফটি কেবিনেট এখনো এসে পৌঁছায়নি। এছাড়া ৮টি এমসিএইচ-এ ১০ শয্যার আইসিইউ এবং ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের পূর্ত কাজ এবং ৭টি স্থলবন্দরে মেডিকেল স্ক্রিনিং সেন্টার নির্মাণের অ্যাসেসমেন্ট করে নকশা প্রণয়নসহ টেস্টিং কিট ও পিপিই সামগ্রী ক্রয় ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সভাপতির এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ৩০টি জেলা হাসপাতালের জন্য সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে পিসিআর মেশিন ক্রয়ে সিএমএসডি অপারগ বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। সভায় প্রকল্পের পিআইইউ কর্তৃক পিসিআর মেশিন ক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, গত অর্থবছরে গৃহীত ক্রয় কার্যক্রমসমূহকে বর্তমান অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনায় প্রদর্শনে গুরুত্বারোপ করতে হবে। সভায় গৃহীত কার্যক্রমও প্রাপ্ত বরাদ্দের আলোকে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবভিত্তিক করার পাশাপাশি সকল কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং প্রশিক্ষণের সংখ্যা ও ব্যাচ যুক্তিযুক্ত পর্যায়ে কমানোর পক্ষে সবাই মত দেন।
এসআর/এসকেডি/জেএস