অফিস বন্ধ করেও অর্ডার নিচ্ছে কিউকম
ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জের প্রতারণা আর অফিস বন্ধের পর এবার এক নোটিশে নিজেদের অফিস বন্ধ ঘোষণা করল ই-কমার্স সাইট কিউকম। তবে এখনো পণ্যের অর্ডার নিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা ফিজিক্যাল সাপোর্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। কাউকে গুলশান নিকেতনের অফিসে যেতেও নিষেধ করেছে। এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মী জানান, আগামীকাল ২২ সেপ্টেম্বর রাতে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব পিআর কমিউনিকেশন্স আরজে নিরব এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মো. রিপন মিয়া ফেসবুক লাইভে এসে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন এবং গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
অফিস বন্ধের ঘোষণা এবং ফিজিক্যাল সাপোর্ট দিতে অপারগতার কথা বললেও অর্ডার নেওয়া বন্ধ করেনি কিউকম। সবশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখনো বিভিন্ন পণ্যের অর্ডার নিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
অফিস বন্ধের বিষয়ে গত শুক্রবার রাতে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে নিজেদের ফেসবুক পেইজে কিউকম লেখে, ‘সম্মানিত গ্রাহকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিউকমের সকল ফিজিক্যাল সাপোর্ট বন্ধ থাকবে এবং সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ হোম অফিসের মাধ্যমে সেবা প্রদান করবেন। তাই সকল সম্মানিত গ্রাহকদের কিউকমের অফিসে না আসার অনুরোধ করা হচ্ছে।’
গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে একটি মামলায় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
তারা আরও জানায়, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিগ বিলিয়ন রিটার্নের সকল বাইক অর্ডারের পেমেন্টকৃত অর্থের প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্ট ফেরত দেওয়া হবে। বিগ বিলিয়ন রিটার্ন অফারের কোনো মোটরবাইক ডেলিভারি দেওয়া হবে না। বাইক ছাড়া অন্যান্য পণ্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ডেলিভারি অব্যাহত থাকবে বলে জানায় তারা।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য গুগল ফরমের মাধ্যমে রিফান্ড রিকোয়েস্ট করা যাবে। যারা পোস্টার পেমেন্ট গেটওয়ে, ব্যাংক পেমেন্ট, বিকাশ/ নগদ পেমেন্ট ও ইতোমধ্যে চেক নিয়েছেন কিন্তু ক্যাশ করতে পারেননি সকলের জন্য আলাদা আলাদা গুগল ফর্ম শেয়ার করা হবে এবং চেক বাউন্স না হওয়ার জন্য পরবর্তীতে চেক জমা দেওয়ার তারিখ প্রকাশ করা হবে। পরবর্তী চেক জমা দেওয়ার রিসিডিউল ডেট ঘোষণার আগপর্যন্ত সকলকে ব্যাংকে চেক জমা না দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
সাউথ ইস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংকে লেনদেনের মাধ্যমে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের প্রায় ১১৬ কোটি টাকা হাওয়া করে দিয়েছেন ই-কমার্স সাইট ‘ধামাকা’র শীর্ষ ছয় ব্যক্তি। বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। সংস্থাটি জানায়, প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ ছয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে টাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে দুজন দেশের বাইরে চলে গেছেন। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে কিউকম আরও লিখেছে, বর্তমান এই দুঃসময়ে, সময় এসেছে আপনাদের ই-কমার্সের পাশে থাকার। মানুষের সেবার জন্য কিউকম সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এবং এখনো করছে।
এদিকে ইতোমধ্যে কিউকমের সন্দেহজনক লেনদেনের বিরুদ্ধে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, মোট ৮টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডির ছায়া তদন্ত চলমান রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপিং, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, কিউকম, আদিয়ান মার্ট ও নিডস ডট কম বিডি। এছাড়া ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তদন্ত করছে সিআইডি।
বাংলাদেশে সম্প্রতি একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো ইভ্যালি এবং ই-অরেঞ্জ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ধরনের অফার এবং দ্রুত সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেছিল।
কিন্তু এখন ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে একাধিক মামলা হয়েছে, র্যাব তাদের গ্রেফতার করেছে। ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া মামলায় আজ ইভ্যালির রাসেলের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।
এদিকে ই-কমার্সের নামে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হওয়ায় গ্রাহকদের লোভ কমাতে জনস্বার্থে প্রচারণা চালানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এআর/এনএফ/জেএস