না.গঞ্জে কনস্টেবল নিয়োগে জালিয়াতির সুষ্ঠু তদন্ত চায় টিআইবি
নারায়ণগঞ্জে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে ব্যাপক জালিয়াতি ও সম্ভাব্য ঘুষ লেনদেনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালে জেলা কোটায় নারায়ণগঞ্জে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে কাগজপত্র যাচাই-বাছাইসহ পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতি হয়েছে, যা ২০২০ সালে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এক তদন্তে উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের অন্তত ১৮ জনের বিরুদ্ধে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দাখিল করে চাকরিতে নিয়োগের প্রমাণ মিলেছে। এমনকি স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণপত্র হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন ৫ জন একই নিবন্ধন নম্বরের জমির দলিল দিয়েছে। অন্তত ১১ জন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২৩ দিন পর একই তারিখে, হুবহু একই মৌজা, দাগ ও খতিয়ানে একই সিএস, এসএ ও আরএস নম্বরে নিবন্ধিত জমির দলিল জমা দিয়েছে। অথচ যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছে বা গোপন করে ইতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছে, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয় বলেই ধারণা করা যায়।
জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়টি ‘মানবিক দিক’ বিবেচনায় ইতিবাচক রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন- উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, পুলিশের চাকরিতে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দাখিলের পরও মানবিক দিক বিবেচেনায় নিয়োগের কোনো নৈতিক বা আইনগত ভিত্তি ও সুযোগ নেই। তাই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার কী উদ্দেশ্যে এমন নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে, অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে তার সুরাহা হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, এ নিয়োগে কোনো অবৈধ অর্থের লেনদেন হয়েছিলো কি না সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। সংশ্লিষ্ট উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থেকে অধস্তন কর্মকর্তাদের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত প্রমাণের চেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক ‘কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না” মর্মে ১৪ সেপ্টেম্বর যে অঙ্গীকার করেছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে টিআইবি।
নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির কথা শোনা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা স্বীকার করা হয় না। তাই নারায়ণগঞ্জের এ ঘটনা ‘হিমশৈলের চূড়ামাত্র’, এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না। ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে আগামীতে এ ধরনের অনিয়মের বেপরোয়া পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব হবে না এবং অপরাধীরা আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠবে; যা চূড়ান্ত বিচারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার সংকট আরও প্রকট করবে। তাই অবিলম্বে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিভাগীয় প্রক্রিয়া ও প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইনে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
আরএম/আরএইচ