ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ
বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ ঠিক তার উল্টো পথে হাঁটছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে হাঁটাবান্ধব পরিবেশের পাশাপাশি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছের বক্তারা।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ, কার-ফ্রি সিটিস এলাইন্স বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ আয়োজনে ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস ২০২১ : নগর পরিকল্পনায় আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়িতে ৭ শতাংশ ট্রিপ হয়। এ জন্য সড়কের ৭০ ভাগ জায়গা দখল করে রাখে। অপরদিকে বাস, রেল, নৌপথ, হাঁটা ও রিকশাসহ অন্য মাধ্যমে ৯৩ শতাংশ চলাচল হলেও এ মাধ্যমগুলোর জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। পরিকল্পনায় হাঁটা ও গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়ার ফলে যানজট, জ্বালানি দূষণ এবং দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমরা শহরকে দূষণের শহর, যানজটের শহর আর অনিরাপদ শহরে রূপান্তর করেছি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে হেলথ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, নগর যাতায়াত ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত গাড়িবান্ধব প্রকল্প (ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) থেকে বের হয়ে অযান্ত্রিকযান, পথচারীদের প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্ম-ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়নকে আমরা জিডিপি দিয়ে মূল্যায়ন করছি। যেখানে মানুষের মূল্যায়ন নেই।
পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি খন্দকার এম আনসার হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে বাস, রিকশা, সাইকেল ও হেঁটে যাতায়াত বেশি হলেও এ মাধ্যমগুলো মাত্র ৩০ ভাগ সড়ক ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। অথচ সাড়ে ৫ শতাংশ লোকের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। অল্প সংখ্যক এ মানুষের জন্য নগর উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা সাধারণ মানুষের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছি।
নাসফের সভাপতি মু. হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। সড়কে যে মাধ্যমে যতটুকু যাতায়াত হয় তাকে ততটুকু জায়গা দিতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ১৬০ বর্গফুট জায়গা নেয় এবং ৯০ ভাগ সময় পার্কিং অবস্থায় থাকে।
সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক মাসুম বিল্লাহ বলেন, সারা বিশ্বে যখন প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে আমরা চলছি উল্টো পথে। নগর পরিকল্পনা মানুষের জন্য হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারীর বলেন, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি বেশি ট্রিপ হয়। এর মধ্যে হাঁটা ও গণপরিবহনে বেশি যাতায়াত হলেও পরিকল্পনায় এ মাধ্যমগুলো উপেক্ষিত। গত ১০ বছরে যানজট নিরসনে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু তার সুফল মিলছে না।
এএসএস/এসকেডি