একসময় আমরা বুড়িগঙ্গার পানি পান করতাম, এখন...
২০১৩ সালের পানি আইন অনুযায়ী নদীর প্রবাহ চলবে তার নিজ গতিতে। নদী পাড়ের মানুষকে বোঝাতে হবে যে, নদীর মালিকানা নদী পাড়ের মানুষেরই। নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্পের আয়োজনে বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় ‘বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ ও প্রতিকার’ শিরোনামে এক নাগরিক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভাটি কামরাঙ্গীরচরের শেখ জামাল হাই স্কুলের পশ্চিম পাশে বেড়িবাধ সংলগ্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক সভায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক এবং ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক শরীফ জামিল বলেন, নদী পাড়ের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে নদী রক্ষায়। ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর ৬০ ভাগ দূষণ হয় শিল্প বর্জ্যের দ্বারা, ৩০ ভাগ দূষণ হয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে আর ১০ ভাগ দূষণ হয় গৃহস্থালীর বর্জ্যে। এই দূষণ প্রতিকারে মানুষকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি পরিবর্তন আনতে হবে নীতি ও আইনি কাঠামোতে।
৫৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরে আলম চৌধুরী বলেন, একসময় আমরা এই বুড়িগঙ্গার পানি পান করতাম। আজকে এই পানির পঁচা গন্ধে নদীর পাড়ে যাওয়া যায় না। আমরা জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করছি। আপনারা সংগঠন হিসাবে এগিয়ে এসেছেন, জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। সকলকে নিয়ে একসাথে যদি বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এমন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় তাহলে আমরা বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে পারবো।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ক্ষমতাবান মানুষেরাই নদী দখল ও দূষণ করে। নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে আমাদেরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। নদী পাড়ের মানুষ এবং সরকারের যৌথ চেষ্টায় বাংলাদেশ একদিন পরিবেশবান্ধব রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবে।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণমুক্ত হলে এই পানি ওয়াসার মাধ্যমে আমরাও ব্যবহার করতে পারবো। ঢাকাবাসীর ঘরে ঘরে আরও কম খরচে মানুষ ওয়াসার পানি ব্যবহার করতে পারবে, পানির জন্য পদ্মা কিংবা মেঘনায় যেতে হবে না।
সভায় অন্যান্যরা বলেন, দূষিত হতে হতে ঢাকার মূল নদী বুড়িগঙ্গা এখন মৃতপ্রায় অবস্থা। এই এই নদীকে যদি রক্ষা করা না যায়, নদীকে যদি ফিরিয়ে আনা না যায় তাহলে পরিপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব হবে না। তাই আমরা যেমন এগিয়ে এসেছি, সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সকল নদীকে দূষণ ও দখলের হাত থেকে বাঁচাতে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, সচেতন নগরবাসীর সভাপতি জিএম রুস্তম খান, সচেতন নাগরিক সমাজ সংগঠনের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর আদেল প্রমুখ।
এমএইচএন/এনএফ