সকালে বের হয়ে মধ্যরাতে বাসায় আসত জঙ্গি উজ্জ্বল মাস্টার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজের পাশেই সিটি ডেভলপার লিমিটেড হাউজিং সোসাইটির অবস্থান। মূল সড়ক থেকে দুই মিনিটের হাঁটা পথ দূরত্বে চারতলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসা থেকে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সক্রিয় সদস্য উজ্জ্বল মাস্টারকে আটক করেছে র্যাব।
চলতি মাসের ২ তারিখে নিজেকে একটি প্রিন্টিং প্রেসের মালিক পরিচয়ে অগ্রিম ৫ হাজার টাকা দিয়ে বাসাটি ভাড়া নেন তিনি। দুই কক্ষের বাসাটিতে উজ্জ্বল ছাড়া আরও একজন থাকতেন। ওই ব্যক্তিকে প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী বলে বাসার দারোয়ানকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন উজ্জ্বল মাস্টার। অভিযানে উজ্জ্বল মাস্টারকে আটক করতে পারলেও কর্মচারী পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।
দারোয়ান মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়ির মালিক শাহজাহান থাকেন মোহাম্মদপুর এলাকাতে। বাড়িটি দেখাশোনা করতেন দারোয়ান মহিউদ্দিন। বাড়ি ভাড়া দেওয়া, ভাড়া উঠানোর যাবতীয় কাজ করতেন তিনি।
দারোয়ান জানান, আটক জঙ্গি গত ৩ তারিখে মালামাল ও তার সহযোগীকে নিয়ে এ বাসায় ওঠেন। বাসায় ওঠার পর তিন থেকে চার দিন উজ্জ্বলের সঙ্গে কথা হয় তার। মহিউদ্দিন ও তার সহযোগী দিনে কখনোই বাসায় থাকতেন না। সকালে বের হয়ে মধ্যরাতে বাসায় ফিরতেন। এছাড়া বাসাটিতে আরও একজন লোকের যাতায়াত ছিল বলেও তিনি জানান।
দারোয়ান মহিউদ্দিন বলেন, উজ্জ্বল মাস্টারের বয়স হবে আনুমানিক ৩০ বছর, আর তার সহযোগীর বয়স ২৫ বছরের মতো হবে। র্যাবের হাতে আটক লোকটি সকাল সাতটার সময় নাস্তা করে বাসা থেকে বের হয়ে যেত। সারাদিন বাসায় আসত না। রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরত। সে ছাড়া তার যে সহযোগী ছিল এবং আরেক ব্যক্তি যিনি যাতায়াত করত তাদের নাম পরিচয় জানি না। তারা দুই জন সর্বশেষ গতকাল এসে বের হয়ে যায়।
মহিউদ্দিন আরও বলেন, বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে পারেনি। সে পরিবার নিয়ে বাসাটিতে থাকবে বলে ভাড়া নিয়েছিল। আটক ব্যক্তি বলেছিল স্ত্রীকে নিয়ে ওঠার পর দুই জনের জাতীয় পরিচয়পত্র দেবে। পরে গতকাল রাতে তাকে আমি সর্বশেষ জিজ্ঞাসা করি তার স্ত্রীকে কখন নিয়ে আসবে। এই কথার উত্তরে সে আমাকে বলেছিল আজ (বৃহস্পতিবার) তাকে নওগাঁ থেকে নিয়ে আসবে।
আটক ব্যক্তির চলাফেরা সন্দেহজনক মনে হয়েছে কি না জানতে চাইলে দারোয়ান মহিউদ্দিন বলেন, অল্প কিছুদিন হলো সে বাসাটি ভাড়া নিয়েছে। তাই তার চেলাফেরা তেমনভাবে লক্ষ্য করা হয়নি। তবে সে কখনো প্যান্ট শার্ট আবার কখনো পায়জামা-পাঞ্জাবি পরত। মাঝে-মধ্যে পানির বোতল, আর খাবার-দাবার নিয়ে আসত।
এদিকে সকাল সাড়ে ৯টায় বসিলার জঙ্গি আস্তানার অভিযান শেষে র্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার জেএমবির ৪ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বসিলার এই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রেফতার জঙ্গিরা জিজ্ঞাসাবাদে বসিলা থেকে আটক জঙ্গির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছিল র্যাবকে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ঢাকার বাইরে জামালপুর ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে। পরে
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মধ্যরাত থেকে বসিলা জঙ্গি আস্তানাটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বর্তমান সময়ের জেএমবির এক শীর্ষ নেতাকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব। আটক জঙ্গির নাম এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার।
তিনি বলেন, অভিযানস্থল থেকে পিস্তল, গুলি, নগদ পোনে তিন লাখ টাকা, রাসায়নিক দ্রব্য, দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও বেশ কিছু জিহাদি বই জব্দ করা হয়।
এমএসি/জেডএস
