বান্ধবীকে সোয়া ৪ কোটি টাকার ফ্ল্যাট উপহার দেন পি কে হালদার
অর্থপাচার ও বিভিন্ন প্রতারণা করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের ঘনিষ্ঠ ও সহযোগী হিসেবে যে মানুষটির নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি হলেন অবন্তীকা বড়াল। আপাত দৃষ্টিতে এই নারী পি কে হালদারের ব্যবসায়িক পার্টনার হলেও অনেকে বান্ধবী বলেও উল্লেখ করছেন।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চোখে পি কে হালদারের প্রতারণার বড় একজন অংশীদার হচ্ছেন এই অবন্তীকা।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, অবন্তীকাকে ২০১৬ সালে চার কোটি ৩৫ লাখ টাকায় ধানমন্ডির ১০নং রোডে প্রায় তিন হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনে দেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার হালদার।
এর পুরো ঠিকানা- ফ্ল্যাট ই-১২, বাড়ি নং-৩৯, রোড-১০/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা। বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেড (বিটিআই) থেকে ক্রয়করা ফ্ল্যাটটির মূল্য পরিশোধ হয় নগদ ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে। যার পুরো অর্থই আসে পি কে হালদারের বিভিন্ন হিসাব থেকে।
শুধু তাই নয়, অর্থ আত্মসাতের মহাপরিকল্পনায় পি কে হালদার, তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী এবং অবন্তীকা বড়াল মিলে প্রথমে ‘সুখদা’ নামে একটি কোম্পানি গড়ে তুলেছিলেন। এরপর ‘সুখদা’র শেয়ার দিয়ে খোলেন হাল ইন্টারন্যাশনাল। সুখদা’র পক্ষে এই হাল’র ৯০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন অবন্তীকা বড়াল। হাল ক্যাপিটালের ৯০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় থাকে হাল ইন্টারন্যাশনাল। বাকি ১০ ভাগ রাখা হয় হাল ক্যাপিটালের দুই কর্মচারীর নামে। তাঁরাই হাল ক্যাপিটালের নামে আগে থেকে বিদ্যমান মাইক্রোটেকনোলজি নামে একটি কোম্পানির শেয়ার কেনেন। এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে।
পি কে হালদার-অবন্তীকা সম্পর্কের রসায়ন খুঁজতে গিয়ে আরও জানা যায়, পি কে হালদারের বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের দিঘিরজান গ্রামে। অবন্তীকার বাড়িও পিরোজপুরে। এলাকার মেয়ে হিসেবেই পরিচয়। অবন্তীকার বাবা ছিলেন কলেজ শিক্ষক, নাম অরুণ বড়াল। অবন্তীকার পরিবার পিরোজপুরে বড়াল পরিবার নামে পরিচিত। অবন্তীকার সঙ্গে পি কে হালদারের পরিচয়ের এক পর্যায়ে ‘ঘনিষ্ঠতা’ হয়।
পি কে হালদারের অর্থপাচার ও প্রতারণার মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন অবন্তীকা বড়াল। বর্তমানে কারাগারে আছেন। ইতোমধ্যে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম।
এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ (পরিচালক) কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘গত ২৮ ডিসেম্বর অবন্তীকা বড়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলব করা হয়েছিল। তবে ওই সময় তিনি হাজির হননি। এরপরই তার বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের পর তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ড চায় তদন্তকারী কর্মকর্তা। শিগগিরই রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানসহ পিপলস লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই উঠে আসে প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর হাজির হতে নোটিশ দিয়েছিল সংস্থাটি। এর আগে ৩ অক্টোবর তাঁর বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ঠিকই দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। পরে দেশে আসার কথা বলেও আর আসেননি। এরই মধ্যে ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে গ্রেপ্তার পরোয়ানি দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল।
এদিকে, পিকে হালদারের প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন দিয়েছেন আদালত। আর দুদক এখন পর্যন্ত সহযোগী হিসেবে ৬২ জনকে শনাক্ত করেছে দুদক।
আরএম/এফআর