আইজিপি নিয়ে হারুনের বক্তব্যের এক্সপাঞ্জ চান হুইপ স্বপন
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের সংসদে দেওয়া বক্তব্যের এক্সপাঞ্জ চেয়েছেন সরকার দলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ দাবি জানান।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মদ, জুয়া, হাউজি, রেসকোর্স সব কিছু আইন করে বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার প্রয়াত নেতা জিয়াউর রহমান সাহেব বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম বলে বাংলাদেশে মদ, জুয়া, হাউজি সব কিছু জায়েজ করে দিয়েছেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় আজকে বাংলাদেশে মদ, জুয়া, হাউজি বন্ধ করা খুব দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, প্রিন্সেস লাকী খানদের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। এই মহান জাতীয় সংসদে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান সাহেবের আমলে প্রিন্সেস লাকী খানদের যে উদ্যাম নৃত্য, যে অশ্লীলতা- সেটি বাংলাদেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করার প্রধান কারণ। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম বলে এই সমস্ত অশালীন, অনইসলামিক কাজগুলো শুরু করেছিলেন জনাব হারুনুর রশীদ সাহেবের প্রয়াত নেতা জিয়াউর রহমান সাহেব।
সরকার দলীয় এই হুইপ বলেন, তিনি (জিয়াউর রহমান) শুধুমাত্র জাতির জনককে সপরিবারে খুন করে ক্ষ্যান্ত হন নাই। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বাধীনতার চেতনা সব কিছু ধ্বংস করবার জন্য যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই আজকে এগুলো চলছে। তিনি (হারুনুর রশীদ) পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশপ্রধান থেকে শুরু করে অনেকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আমি আজকের এই মহান সংসদে গতকাল জনাব হারুনুর রশীদের প্রদত্ত বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, আমার জানা নাই, ৫০ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের কোনো ক্লাবে পুলিশের প্রধান সভাপতির দায়িত্ব বা এই রকম ক্লাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেছেন কি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন বিএনপির এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমণিকে গ্রেফতার ও জামিনের ঘটনাও বেশ নাড়া দিয়েছে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পরীমণি গণমাধ্যমে বলেছেন, কত নাটক করে তাকে ধরে নেওয়া হয়েছে। তাকে বলা হয়েছিল, শুধু অফিসে নেওয়া হবে আর কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হয়।
হারুনুর বলেন, পরীমণির ঘটনা তদন্তের তদারক কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছেন। পরীমণির বাসায় অভিযান চালিয়েছিল র্যাব। র্যাব নিজেরা এই ঘটনা তদন্ত করার দাবি জানিয়েছিল। কারণ, এর পেছনে অনেক বড় শক্তি জড়িত। এদের যারা ব্যবহার করছে, তাদের চিহ্নিত করা দরকার।
তিনি বলেন, পরীমণির ঘটনায় হাইকোর্ট পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, পরীমণি একজন নারী, অসুস্থ, চিত্রজগতের কর্মী— এ জন্য জামিন দেওয়া হয়েছে। এটা কোনো কথা হতে পারে? তাকে পরপর কেন তিন দিন রিমান্ডে নেওয়া হলো, এটি নিয়ে হাইকোর্ট জজকোর্টের নথি তলব করেছেন। এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে ‘পারসেপশনটা’ ভিন্ন হচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, র্যাব যে পরীমণিকে গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছিল, গ্রেফতার করেছিল, তার বাড়িতে যে মিনি বার, এগুলো কি অসত্য?
পরীমণিকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন বিএনপির এই সংসদ সদস্য।
মোসারাত জাহানের (মুনিয়া) আত্মহত্যায় প্ররোচনায় মামলা তদন্তের জন্য নতুন করে র্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিবৃতি দাবি করেন হারুন।
তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে মুনিয়া নামে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিলেন। আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলার পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে। বসুন্ধরার এমডির সঙ্গে মুনিয়ার ফোনালাপ, তার সঙ্গে ছবিও গণমাধ্যমে এসেছে। এই ঘটনার তদন্তভার র্যাবকে দেওয়া হবে কি না? যদি না দেওয়া হয়, তাহলে মনে করব এসব অপরাধে যারা জড়িত, সরকার তাদের চিহ্নিত করতে চায় না, আড়াল করতে চায়। এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া দরকার। অপরাধগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা দরকার।
এইউএ/এইচকে