আলোচিত মামলার আসামিদের অপহরণ-চাঁদাবাজিই ওদের পেশা
বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আব্দুল মালেক। ব্যবসায়ী মালেক ব্যাংক ঋণখেলাপিও। বিষয়টিকে পুঁজি করে তাকে হোটেলে ডেকে জিম্মি করে ব্লাকমেইল করা হয়। কথিত কয়েকটি নাম সর্বস্ব পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে দাবি করা হয় কোটি টাকা।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ও গোয়েন্দা অনুসন্ধানের ভিত্তিতে কথিত দুই সাংবাদিককে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব বলছে, সাংবাদিকতার আড়ালে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও অপরাধীদের টার্গেট করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই চক্রটির কাজ। দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন ও নামসর্বস্ব পত্রিকার নাম ব্যবহার করে রাজধানীর উত্তরায় চক্রটি তাদের অপরাধ কার্যক্রম চালাচ্ছিল।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) রাতে উত্তরার একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মালেকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব।
চক্রের প্রধান পরিকল্পনাকারী বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সাংবাদিক মো. ইকবাল হোসেন (৩১) ও তার সহযোগী মো. আমিরুল ইসলাম (৩৫)।
তাদের কাছ থেকে ক্যামেরা ও বেসরকারি একটি টেলিভিশনের বুম, পাঁচ লাখ টাকা, তিনটি ১০০ টাকার স্টাম্প, দুটি ব্যাংক (৪৫ লাখ ও ৫০ লাখ টাকার) চেক জব্দ করা হয়।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে আব্দুল মালেককে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে কোটি টাকা চাঁদা দাবি করছে একটি চক্র। এমন অভিযোগে র্যাব তাকে (ভিকটিম) উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। একই দিন বিকেলে উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে মালেককে উদ্ধার করা হয়। এ সময় পরিকল্পনাকারী ইকবাল হোসেন ও তার সহযোগী আমিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানিয়েছে, মালেককে ব্ল্যাকমেইল করতে বেশ কয়েকদিন ধরেই তাকে অনুসরণ ও তথ্য অনুসন্ধান করছিল।
মালেক কখন উত্তরখানে আসে যায়, সে তথ্য সংগ্রহ করে অপহরণ-ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করছিল তারা। ঘটনার দিন দুপুরে মালেক উত্তরখানে তার আত্মীয়র বাসায় গেলে পরিকল্পনাকারীরা সেখানে যায়। এ সময় তারা এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে।
চাঁদা পরিশোধ না করলে তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে হলমার্ক কেলেঙ্কারি বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করা ও তাকে গ্রেফতার করিয়ে দেবে মর্মে হুমকি দেয়। পরে মালেককে উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।
এরপর স্বজনদের কাছে ফোন করে চাঁদা দাবি করা হয়। এক কোটি টাকা, চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে আসতে বলা হয়। অভিযুক্তরা একটি চাঁদাবাজ দলের সক্রিয় সদস্য বলে দাবি র্যাব গণমাধ্যম কর্মকর্তা কমান্ডার মঈনের।
তিনি বলেন, তাদের দলে ১০-১৫ জন সদস্য আছে বলে র্যাব জেনেছে। চক্রের সদস্যরা এলাকায় প্রাণের বাংলাদেশ, স্বাধীন সংবাদ, বিডাব্লিউ নিউজ, প্রথম বেলা, ডেইলি নিউজসহ আরও কয়েকটি নামসর্বস্ব সংবাদপত্রের পরিচয় দিয়ে থাকে।
কমান্ডার মঈন বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে উত্তরা ও উত্তরখান এলাকায় এসব সংবাদপত্রের পরিচয় দিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, অপরাধী ও সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিল। ইকবাল হোসেন ও আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব মুখপাত্র বলেন, মূল পরিকল্পনাকারী মো. ইকবাল হোসেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করত। সেখানে আমরা যোগাযোগ করে জেনেছি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে সাংবাদিক ইকবালকে কয়েক মাস আগে চাকরিচ্যুত করেছে টিভি কর্তৃপক্ষ।
জেইউ/ওএফ