২৭ দিন পর বাসায় পরীমণি
মাদক মামলায় গ্রেফতারের ২৭ দিন পর বাসায় ফিরেছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে তাকে বহনকারী গাড়িটি কারাগার থেকে বের হয়। এরপর দুপুর ১টার দিকে বনানীর নিজ বাসায় ফেরেন আলোচিত এই নায়িকা।
কারাগার থেকে বেরে হওয়ার পর অনেকটা হাসিখুশি দেখা যায় পরীমণিকে। এ সময় তার পরনে ছিলো সাদা টি-শার্ট, মাথায় বাঁধা ছিল একটি সাদা কাপড়। কারাগারে প্রধান ফটকে গাড়ির সান-রুফ দিয়ে বের হয়ে উপস্থিত জনতার সঙ্গে সেলফিও তোলেন তিনি।
বেলা ১২টা ৫৮ মিনিটে পরীমণি তার বনানীর বাসায় সাদা রংয়ের গাড়িতে করে প্রবেশ করেন। তার আগে থেকে বাসার সামনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মী ও সাধারণ মানুষজন জড়ো হন। গাড়ি থেকে নামার পর পরীমণিকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছিল। তার পরনে ছিল সাদা রঙের টিশার্ট। কিছু ভক্তের রিকোয়েস্ট সেলফিও তোলেন তিনি। বাসার গেটে দুই মিনিটের মতো অবস্থান করলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। তবে বাসায় প্রবেশের সময় অপেক্ষারত গণমাধ্যমকর্মীদের শুধু বলেছেন- ‘আসেন নাস্তা খেয়ে যান।’
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় পরীমণির খালু জসিম উদ্দিনসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয় ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী কারা ফটকে যান। এ সময় তার আইনজীবী বলেন, আদালত দুই পক্ষের আইনজীবীর শুনানির পর তাকে জামিন দেন। কাশিমপুর কারাগারে জামিনের কাগজপত্র না আসায় গতকাল তাকে মুক্তি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। অভিযোগপত্র দায়েরের পর পরীমণি আবারও আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।
কারাগারে ছিলেন ১৯ দিন
গত ৪ আগস্ট রাতে প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরীমণি ও তার সহযোগী দীপুকে আটক করে র্যাব। পরদিন র্যাব এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিল, পরীমনি আগে থেকেই অ্যালকোহলে আসক্ত। তার বাসা থেকে ১২০টি খালি বোতল ও ১৯টি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের সময় এলএসডি ও আইসের মতো মাদকও উদ্ধার করা হয়েছে বলে র্যাব দাবি করে।
পরে ৫ আগস্ট র্যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরীমণি ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে তাদের আদালতে পাঠায়। সেদিন থেকেই পরীমণির বন্দিজীবন শুরু হয়। ১৯ দিনের মধ্যে প্রথম দিন থানায় আটক এবং পরে সাতদিন রিমান্ডের জন্য তাকে কারাগারের বাইরে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে।
রিমান্ডে ছিলেন ৭ দিন
৫ আগস্ট পরীমণির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে তাকে আদালতে তোলা হয়। সেদিন পরীমণি এবং দীপুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ।
এরপর গত ১০ আগস্ট পরীমণি ও দীপুকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের আরও দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আবারও গত ১৯ আগস্ট পরীমণির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম। সবমিলিয়ে বাসার বাইরে মোট ২৭ দিনের মধ্যে ৭ দিনই তাকে থাকতে হয়েছে রিমান্ডে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ শুনানি শেষে ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় পরীমণির জামিন আদেশ দেন।
কারাগারে কেমন ছিলেন পরীমণি
আদালতে শুনানির পর সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে নেওয়া হয় পরীমণিকে। কারাগারে গিয়ে একদমই নীরব হয়ে যান ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা। শুরুতেই কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের রজনীগন্ধা ভবনে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছে তাকে।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, সবসময়ই পরীমণিকে কারাগারে চিন্তামগ্ন দেখা গেছে। তবে তিনি স্বাভাবিক খাবার খেয়েছেন। অন্য বন্দিদের জন্য যেসব খাবার, পরীমণির জন্যও সেগুলোই দেওয়া হয়েছে।
তিন বিবেচনায় জামিন পেলেন পরীমণি
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ শুনানি শেষে ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় পরীমণিকে জামিনের আদেশ দেন।
যেহেতু পরীমণি একজন চিত্রনায়িকা এবং একজন নারী। তাছাড়া সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রীতিলতা নামক একটি চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের শিডিউল চলছে। এসব বিষয় বিবেচনায় তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল পর্যন্ত জামিনের আদেশ দেন আদালত।
পিএসডি/টিআই/এমএইচএস