উপরে মেট্রোরেল, নিচে ভোগান্তি
যানজট কমাতে রাজধানীতে বিস্তৃত হচ্ছে মেট্রোরেল। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার মেট্রোরেল দৃশ্যমান হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই রুটের মেট্রোরেলের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুর পল্লবী পর্যন্ত রেল চলাচলের ট্র্যাকসহ বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগও দেওয়া হয়েছে।
আজ (২৯ আগস্ট) বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এদিন উত্তরা থেকে পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত উড়াল পথে ট্রেন চলাচল করে। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করেছিল। এ সময় কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। ২০১৭ সালের আগস্টের প্রথম দিনে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর-১২ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের নিচের কাজ শেষ হলেও সড়কের মেরামত করা হয়নি। শুধু আগারগাঁও থেকে পরিকল্পনা কমিশন পর্যন্ত সড়কের কিছুটা অংশ মেরামত করা হয়েছে। ভাঙা সড়কের কারণে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
মিরপুরের বাসিন্দা সজল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের ভোগান্তি অব্যাহত আছে। মেট্রোরেলের কাজ প্রায় শেষের দিকে, তাহলে নিচের সড়ক এখনও মেরামত করা হচ্ছে না কেন? মিরপুর-১২ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বেশির ভাগ সড়কে বড় বড় গর্ত। এই সড়কে গাড়ি চললেই ধুলাবালি উড়ে বায়ু দূষণ হচ্ছে।
মইনুল নামে আরেকজন বলেন, মেট্রোরেলের কাজ শুরুর পর থেকেই এই এলাকার মানুষ দুর্ভোগে। এই ধুলাবালি ও খোঁড়াখুঁড়ি থেকে বাঁচতে অনেকেই মিরপুর ছেড়েছেন। সড়ক মেরামত না হওয়াতে এখনও দুর্ভোগ কমেনি জনসাধারণের। তবে আগারগাঁওয়ের অংশে সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, মেট্রোরেলের সড়ক জুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ লাগানো হবে। মেট্রোরেলের পথ জুড়ে পাতাবাহার, কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ, কুর্চি, রাধাচূড়া, হৈমন্তী, টগর, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
আগারগাঁও থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সড়ক আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। সড়কের মাঝখানে মেট্রোরেলের পিলারের পাশ ঘেঁষে কংক্রিকেটের ছোট ছোট ওয়াল দেওয়া হয়েছে। এরপরে মাটি ভরাট করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ফুল গাছ লাগানোর জন্য জৈব সারও দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রতিটা প্যাকেজের আওতায় ফুলের গাছ লাগানোসহ বনায়নের জন্য পৃথক বরাদ্দও রয়েছে।
প্যাকেজ-৩ ও ৪ এর আওতায় উত্তরার উত্তর অংশ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ কাজ অন্তর্ভুক্ত। ইতোমধ্যেই পরিষেবা স্থানান্তর, চেকবোরিং, টেস্ট পাইল, মূল পাইল, পাইল ক্যাপ, আই গার্ডার, প্রিকাস্ট গেমেন্ট কাস্টিং, পিয়ার হেড, ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব প্যারাপেট ওয়াল ভায়াডাক্টের ওপর স্থাপন, ৫টি লং স্প্যানসহ সব স্টেশনের উপ-অবকাঠামো ও ছাদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। উত্তরার উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ এবং পল্লবী স্টেশনের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। সব স্টেশনের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্লাম্বিং কাজসহ যাত্রীদের প্রবেশ-বাহির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
অন্যদিকে, উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রতিদিন এ এলাকায় বসবাসকারী লাখো নগরবাসী মেট্রোরেল ব্যবহার করে গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
এসআর
এমআই/এমএইচএস