চিড়িয়াখানায় শিশুদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
খোলার দ্বিতীয় দিন শনিবার (২৮ আগস্ট) মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় দুপুর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। তবে বেলা যত গড়িয়েছে বেড়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকা শিশুদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মুখরিত চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গণ। স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছে ৮৬ দশমিক ৬৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা রাজধানীর এ চিড়িয়াখানাটি।
শনিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কাউন্টার ফাঁকা, দুই তিনটি কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে মাস্ক পরে লাইন ধরে চিড়িয়াখানায় ঢুকছেন দর্শনার্থীরা। ঢোকার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দর্শনার্থীদের হাতে স্প্রে করে দিচ্ছেন। প্রতি ১৫ মিনিট পরপর মাইকে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিড়িয়াখানায় চলাফেরা করতে দর্শনার্থীদের সতর্ক করা হচ্ছে। চিড়িয়াখানায় আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীই পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। এর মধ্যে শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
মাদারীপুর থেকে ছেলে ও ভাগনেকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন মোহাম্মদ কাঞ্চন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাচ্চাদের ইচ্ছা ছিল চিড়িয়াখানা দেখবে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায় তাদের নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। অবশেষে তাদের মনে আশা পূরণ হয়েছে আজ। চিড়িয়াখানার পরিবেশ খুব সুন্দর, দেখেও অনেক ভালো লাগছে।
তিনি বলেন, চিড়িয়াখানায় ঢোকার পরই আনন্দে মেতে উঠেছে তারা। পুরো চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখছে। তাদের এ আনন্দ দেখে আমারও অনেক ভালো লাগছে।
কাঞ্চনের ছেলে আব্দুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলে, উটপাখি, কুমির, হরিণ, বাঘ, সিংহ দেখেছি। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে উটপাখি দেখে।
কাঞ্চনের ভাগনে নূর উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলে, পাখি, কুমির, বানর, সাপ, বাঘ, হাতি দেখেছি। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
করোনার কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ প্রায় দেড় বছর ধরে। সংক্রমণ এড়াতে দীর্ঘদিন ঘর থেকে বের হয়নি শিশু সুমন। আজ বাবা-মায়ের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছে সে। চিড়িয়াখানা গেটের সামনে গাড়ি থেকে নামতেই চোখে-মুখে আনন্দ ফুটে ওঠে তার। ভেতরে ঢুকে প্রথমেই হরিণ দেখে, মা হরিণ হরিণ বলে চিৎকার করে সুমন। বাবা আমি হরিণের কাছে যাবো, হরিণ ধরবো বলে বায়না ধরে।
বিয়ের দুই মাস পর চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসেছেন গাজীপুরের আরেফিন ও শিল্পী। তারা হেঁটে হেঁটে হরিণ, কুমির, বানর,ভাল্লুক, সিংহ, ময়ূর, জিরাফ দেখছেন আর ছবি তুলছেন।
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এ দম্পতি বলেন, চিড়িয়াখানায় এসে অনেক ভালো-লাগছে। সবুজ পরিবেশ, সুন্দর রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন প্রাণী দেখে ভালো লাগছে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে গতকাল শুক্রবার (২৮ আগস্ট) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিড়িয়াখানা খোলা হয়। তবে চিড়িয়াখানায় করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। করোনার কারণে দীর্ঘ দিন চিড়িয়াখানা বন্ধ ছিল। এ সময় সুন্দর পরিবেশ পেয়ে পশুপাখি অনেক ভালো ছিল। তাতে প্রজনন বেড়েছে। দুই দফায় অন্তত ৪৫০টি পশুপাখির জন্ম হয়েছে। এছাড়া দুই শাবকসহ এখন বাঘ রয়েছে ১১টি।
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. আব্দুল লতীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনায় কারণে চার মাস ২৫ তিন বন্ধ চিড়িয়াখানা। সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পর শুক্রবার থেকে আবারও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। টিকিট কাটা থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে। আমরা যেসব নির্দেশনা দিয়েছি, সেগুলো মেনে চললে সাধারণ মানুষ যেমন সুস্থ থাকবে তেমনি চিড়িয়াখানার পশু-প্রাণীও ভালো থাকবে। গত এক বছর নিরিবিলি পরিবেশ আর প্রাণীদের সঠিক যত্নের কারণে প্রজনন হার অনেক বেড়েছে। সেটা ধরে রাখতে চাই আমরা।
এমআই/এসকেডি