মেয়েদের ভবিষ্যৎ ভেবে সমঝোতায় রাজি বাবা-মা
দুই মেয়ের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সমঝোতা করতে রাজি হয়েছেন জাপানি নাগরিক মা এরিকো ও বাবা ইমরান শরীফ। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে তেজগাঁওয়ের উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে সামনে দুই পক্ষ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এরিকো বলেন, ‘সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সমঝোতায় রাজি হয়েছি। বাচ্চাদের দেখে আসলাম তাদের হাস্যোজ্জ্বল দেখেছি। নিজ হাতে তাদের গোসল করিয়েছি। আমি সত্যিই গর্বিত এখানকার যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন আমার সন্তানদের প্রতি তারা অনেক আন্তরিক।’
ভিকটিম সেন্টারের পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যদিও এটি কোনো পাঁচ তারকা হোটেল নয়, তারপরও পরিবেশ সুন্দর পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপদ।’
এ সময় এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদিও বলা হয়েছে একটি ফ্ল্যাটকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তা আসলে সত্য নয়। ফ্ল্যাটের বিষয়টি একটি বিষয় ছিল, তবে সেটি একমাত্র কারণ ছিল না। তাদের মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে তা নিয়ে জাপানি আদালতে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় এরিকো বিজয়ী হয়েছেন। জাপানি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন যেন এরিকোর কাছে সন্তানদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার স্বামী সেটি না করে বাংলাদেশে চলে এসেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এটি যেহেতু পারিবারিক বিষয়, সেখানে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় জড়িত। এ জন্য আমরা চেষ্টা করছি, আইনি প্রক্রিয়ার বাইরেও সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারব।’
সমঝোতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে কিন্তু এখনো বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি, তারা এখনো স্বামী-স্ত্রী রয়েছেন। যদিও এরিকো বিবাহবিচ্ছেদ দায়ের করেছেন কিন্তু সেই মর্মে সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। এখন নানা ধরনের সমঝোতা করার সুযোগ রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, যতই সমস্যা থাকুক না কেন বাচ্চাদের ভবিষ্যতের জন্য উভয় পক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমরা একটি সমঝোতায় যাওয়ার চেষ্টা করব। মামলার শুনানি আগামী ৩১ তারিখের আগে পরস্পরকে সম্মান জানিয়ে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছি আমরা। এ সমঝোতার বিষয়ে উভয়পক্ষ ও আইনজীবীরা প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছেন।’
মেয়েদের বাবা চাচ্ছেন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে তাদের হোটেলে নিয়ে যেতে এ বিষয়ে মেয়েদের মায়ের ইচ্ছা কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনজীবী বলেন, ‘এখন এই বিষয়টির সঙ্গে উভয় পক্ষ জড়িত। কারো একার পক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তাজনিত কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে সুতরাং কোনো ব্যক্তি এই বিষয়ে মন্তব্য করলে তা কার্যকর করা সম্ভব নয়। তবে দুই পক্ষ একমত হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’
এদিকে সন্তানদের বাবা ইমরান শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে বাচ্চারা ঠিকমতো খেতে পারছে না। ভালোভাবে থাকার জন্য কোনো হোটেলে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যেকোনো ভালো সিদ্ধান্তের জন্য সমঝোতায় বসতে রাজি আছি। সমঝোতার পর ফলাফল কী দাঁড়ায় তার উপর পরবর্তী বিষয়গুলো জড়িত রয়েছে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব আমার বাচ্চারা যেন ভালো থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ভিকটিম সেন্টারে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন তারা অত্যন্ত আন্তরিক।’ বাচ্চারা কেমন আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের মন খারাপ। তারা ডিপ্রেশনে রয়েছে। ১০ ও ১২ বছরের দুটি বাচ্চা আশপাশে যারা আছে সবাই অপরিচিত, কেমন থাকতে পারে আপনারাই বলুন। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে যদি হোটেলে স্থানান্তর করা যায় তাহলে সন্তানদের পাশাপাশি মা-বাবা আলাদা রুমে থাকতে পারবে। এতে তারা মানসিকভাবে শান্তি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘জাপানে ফ্ল্যাটের বিষয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে এটি ভুল। আমাকে দুদিনের লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে পুরোদমে রাস্তায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই আমাকে বাধ্য হয়েই বাংলাদেশে আসতে হয়েছে। জাপানি আদালতে আমি ন্যায় বিচার পাব, এমন আস্থা রাখতে পারিনি। তাই দেশে চলে এসেছি।
এমএসি/এসকেডি