প্রস্তাবিত হাসপাতাল সিআরবি থেকে স্থানান্তরের দাবি
সিআরবি থেকে প্রস্তাবিত হাসপাতাল ও কলেজ নির্মাণ প্রকল্প অন্যত্র স্থানান্তরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মিত হলে পরিবেশ দূষণ ঘটবে এবং পুরো সিআরবি এলাকার পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া সিআরবি এলাকায় যেহেতু বর্ষবরণসহ বছরব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, তার পাশেই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মিত হলে তা রোগী ও শিক্ষার্থীদের পাঠদানেও তীব্র ব্যাঘাত ঘটানোর আশঙ্কা থাকবে। এক কথায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সিআরবির অনুপম ও প্রশান্ত পরিবেশকে ধ্বংস করে দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান অপিনিয়নের (ইকো) উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় সিআরবিতে ১৯৭টি প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭৪ প্রজাতির বড় গাছ ও ৩৭ প্রজাতির মাঝারি গাছ, গুল্ম প্রজাতির ৬৭টি এবং লতা জাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে ১৪ প্রজাতির। বিপন্ন প্রায় ৯টি প্রজাতির গাছও আছে এখানে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে দেশের সংবিধান ও পরিবেশ আইনবিরোধী আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। মানুষের চেতনা, নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কোনো উন্নয়ন হতে পারে না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০০৮ সালে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান চূড়ান্ত পূর্বক ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাংলাদেশ গেজেটভুক্ত প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রণীত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে সিআরবিকে কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সিআরবিকে প্রোটেকটেড এরিয়া হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই হিসেবে সিআরবিতে কর্মাশিয়াল ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া যাবে না। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে এটি সংরক্ষণের জন্য রেলওয়ে, চউক, সিটি করপোরেশনসহ সেবাদানকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত বিষয়টি জানলে জনস্বার্থবিরোধী এ প্রকল্প বাতিলে উদ্যোগী হবেন। আশা করি তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন। প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছু জানানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে যদি সঠিক তথ্য জানানো যায় তাহলে তিনি এ প্রকল্প বাতিল করবেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কো চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনীতিবিদ মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, প্রফেসর মো. হোসাইন কবির প্রমুখ।
কেএম/এসকেডি