স্ত্রীর চিকিৎসার টাকা জোগাতে শিশু জিসানকে অপহরণ-হত্যা করে সেলিম
রাজধানীর খিলগাঁও নন্দীপাড়া থেকে জিসানুল ইসলাম আকাইদ (৫) নামে এক শিশুর গলাকাটা গলিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করেছে মতিঝিল বিভাগ পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার ব্যক্তির নাম মো. সেলিম (৩২)। তিনি ঝালকাঠি সদরের লেসপ্রতাপ বয়াতিবাড়ির মো. এনায়েত বয়াতির ছেলে। পেশায় রিকশাচালক সেলিম সবুজবাগ থানার মাদারটেক শান্তিপাড়ার এ/পি-বাসা নং-৯১/১১/ডি বাসায় থাকতেন।
পুলিশের দাবি, কিডনি ও টিউমারে আক্রান্ত স্ত্রীকে বাঁচাতে সেলিমের প্রয়োজন ছিল বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা। সে টাকা জোগাড় করতে না পেরেই শিশু জিসানকে অপহরণ ও হত্যা করে বাসার মালিককে বিপাকে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন সেলিম।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদ শুক্রবার (৬ আগস্ট) বিকেলে বাসার সামনে ৫-৬ জন বাচ্চার সঙ্গে খেলতে যায়। অন্য বাচ্চারা খেলা শেষে বাসায় ফিরে গেলেও জিসান বাসায় ফেরেনি। পরে ছেলেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন বাবা আব্দুল মালেক। ছেলের সন্ধান না পেয়ে খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (জিডি নং ৩৯৬)।
জিডির প্রেক্ষিতে একাধিক টিম গঠন করে ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। স্থানীয় এবং আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে জানা যায়, শিশু জিসানকে অজ্ঞাত রিকশাচালক রিকশাযোগে নুর মসজিদের দিকে নিয়ে যায়। পরে জিসানের বাবা অপহরণের অভিযোগে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-১১।
ডিসি আ. আহাদ বলেন, মামলার পর একাধিক টিম গঠন করে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অপহৃত শিশুকে উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ভিডিওগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অজ্ঞাত রিকশাচালক অপহৃত শিশুটিকে রিকশাযোগে নিয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি খিলগাঁও থানা ও আশপাশের থানা এলাকার রিকশার গ্যারেজগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সোমবার (৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে খিলগাঁও থানার মধ্য নন্দীপাড়া নূর মসজিদ গলির ৫ম তলা ভবনের ২য় তলা থেকে একটি বাচ্চার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট নমুনা সংগ্রহ করে। খবর পেয়ে বাবা-মা এসে শনাক্ত করেন লাশটি অপহৃত শিশু জিসানের। পরে ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে খিলগাঁও থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. সেলিমকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়। অপহরণের কাজে ব্যবহৃত রিকশা, অপহরণের সময় অপহরণকারীর পরিহিত টিশার্ট ও লুঙ্গি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সেলিম পেশায় রিকশাচালক। দীর্ঘদিন যাবত কিডনি রোগে আক্রান্ত তার স্ত্রী নুপুর আক্তার, পেটেও রয়েছে টিউমার। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক টাকা। সে টাকার জোগান না পেয়ে বাড়ির মালিক বাবুলের স্ত্রীর কাছে টাকা ধার চান। না পেয়ে পরিকল্পনা করেন বিপদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেবেন। এজন্য তিনি গত ৪ আগস্ট ক্ষুর কেনেন। ৬ আগস্ট তিনি মধ্য নন্দীপাড়া ২নং রোডে রিকশা নিয়ে যান এবং সেখানেই শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদকে (৫) ফুসলিয়ে তুলে নিয়ে গলাকেটে হত্যার পর বাসার মালিকের দ্বিতীয় তলায় রেখে যান।
সেলিমের পরিকল্পনা ছিল বাসার মালিক বাবুলকে বাসা পরিষ্কার করতে হবে। লাশ দেখতে পেলে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে লাশটি বাড়ি থেকে সরানোর চিন্তা করবে। এক্ষেত্রে মালিক বাবুলের বাড়ি থেকে লাশ সরানোর কাজের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করবেন। কিন্তু তিন দিন ধরে তাকে বাড়ি পরিষ্কার করার কাজের জন্য না ডাকায় এবং লাশের কোনো প্রকার খোঁজ না পাওয়ায় তার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
ডিসি আ. আহাদ বলেন, গ্রেফতার সেলিমকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে দ্রুত মামলাটির তদন্ত নিষ্পত্তি করে আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
জেইউ/এসএসএইচ