সবই যেন স্বাভাবিক
ঘরে বসেই শোনা যাচ্ছে হকারের হাঁকডাক। ঘর থেকে বের হলেই শোনা যাচ্ছে রিকশার টুংটাং আওয়াজ। আর প্রধান সড়কে গাড়ির ভেঁপু তো আছেই। ক্ষণে ক্ষণে জটলাও লেগে যাচ্ছে সিগন্যালগুলোতে। দেখে বোঝার উপায় নেই বর্তমান সময়টা বিধিনিষেধের।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ চলছে। যা শেষ হবে আর মাত্র দুই দিন পরে ১০ তারিখ দিনগত রাত ১২টায়। বিধিনিষেধে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। একই সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া বাকি সকল দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। নিতান্তই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঘরের বাইরে বের না হয়, সে কথাও বলা আছে বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপনে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! রাজধানীর অলিগলি থেকে রাজপথ যেখানে তাকানো যায় সেদিকেই বিধিনিষেধ ভঙ্গের ছাপ।
রোববার (৮ আগস্ট) রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি এবং শ্যামলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলিতে থাকা হোটেল গুলোতে বসে খাবার সুযোগ রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কথা বলা হলেও প্রায় সকল ধরনের জিনিসপত্রের দোকানপাটই খোলা আছে। তবে প্রধান সড়কের পাশে যাদের দোকান রয়েছে, তারা খুলতে পারেননি। বন্ধ রয়েছে শপিংমলও।
এদিকে, মোড়ে মোড়ে রয়েছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। বিধিনিষেধে মোটরসাইকেল একজন শুধুমাত্র চালক চলাচলের কথা থাকলেও সেটি মানছেন না তারা। বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী তুলে তারা ভাড়ায় চলছেন। মাঝেমধ্যে যাত্রী দেখে দুই একটি ব্যক্তিগত গাড়ি দাঁড়ালে, যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে ওই গাড়িতে চেপে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছেন। গাড়ির সংখ্যা বেশি হওয়াতে বিভিন্ন সিগনালে গাড়ির ছোটখাটো জটলাও চোখে পড়েছে। এছাড়া টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকগুলোর সামনে লাইনে থাকা মানুষ গুলোর মধ্যে কোনো সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি।
শংকর থেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে উত্তরা যাওয়ার জন্য একটি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ৪০০ টাকায় ভাড়া করেছেন আব্দুর রহমান রাজ্জাক। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবকিছু বন্ধ থাকলে না হয় মেনে নিতাম কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সবাই তো সব জায়গায় মুভ করতে পারছে। মাঝখান থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখে নগরবাসীকে ভোগান্তিতে ফেলেছে সরকার। সরকার যদি কঠোরভাবে বিধিনিষেধ সাধারণ জনগণকে পালন করাতে পারত, তবে একটা ভালো ফলাফল পাওয়া যেত। কিন্তু সেটি যেহেতু পারেনি, তাই জনসাধারণকে আর কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না। আজ বাস চলাচল থাকলে আমাকে ৪০০ টাকা দিয়ে উত্তরা যেতে হতো না।
গাবতলী টু সদরঘাট সাড়ে ৬০০
রিকশাগুলো দাপটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঢাকা শহর। গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে তারা। যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে হরহামেশাই আদায় করে নিচ্ছে মোটা অংকের ভাড়া। নিরুপায় হয়ে গোমড়ামুখেই ওই ভাড়া পরিশোধ করছেন যাত্রীসাধারণ।
রোববার সকালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে ফুট ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, সেখানে অসংখ্য রিকশার জটলা রয়েছে। তবে এত রিকশা থাকলেও একজন যাত্রীকে অন্তত তিন থেকে পাঁচজন রিকশাওয়ালার কাছে ঘুরতে হচ্ছে। কারণ, সবাই ভাড়া চাচ্ছেন আকাশছোঁয়া।
সেখানে দাঁড়িয়েই সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের একজন ইন্টার্ন ডক্টর সুমাইয়া হিমু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছি। এখান থেকে আমার বাসা নিয়মিত ৪০ থেকে ৫০ টাকায় যাতায়াত করি। কিন্তু বিধিনিষেধের এই সময়ে কেউই ৭০ থেকে ৮০ টাকার নিচে যেতে চায় না। বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
শ্যামলী মোড়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে। তাদের একজন রহমান সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে গাবতলী থেকে সদরঘাট মালামাল নিয়ে গেলে ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা ভাড়া নেই। আর মানুষ গেলে ৫০০ থেকে সাড়ে পাঁচশ। শুধু আমি না, সবাই এই ভাড়াই নেয়। অন্য সময় মাল নিয়ে গেলে এই ভাড়া সাড়ে ৩০০ টাকা এবং মানুষ থাকলে আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকা সর্বোচ্চ।
এমএইচএন/এইচকে