তাইয়্যেবাহর বিশ্বাস ছিল ‘বোন আজ বাড়ি ফিরবে’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের গেটের সামনে বসে আছে ৬ বছরের তাইয়্যেবাহ। তার একপাশে বসা মা, আরেক পাশে বড় বোন। তাইয়্যেবাহর আরেক বোন তাকিয়া রূপগঞ্জের আগুনে মারা গেছেন। তবে তার মরদেহ চিনতে পারেনি পরিবার।
মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) পুলিশের ফোন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাকিয়ার পরিবার। ছোট্ট তাইয়্যেবাহ যেন মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে তাই গতকালই তাকে বার বার বলা হয়েছে, বোন মারা গেছে। তবে এ কথা বিশ্বাস হচ্ছিল না তাইয়্যেবাহর। বাবা-মা, ভাই- বোনের সঙ্গে বোন তাকিয়াকে নিতে সেও ঢামেকে আসে।
যখন তাকিয়ার মরদেহের কফিন হস্তান্তর করা হলো সেটা দেখে নির্বাক তাইয়্যেবাহ। নিহত তাকিয়ার আরেক বোন আর্জিনা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তিন ভাই, পাঁচ বোন। বোনদের মধ্যে তাকিয়া ছিল চতুর্থ ও তাইয়্যেবাহ পঞ্চম। তারা একে অপরকে খুব ভালোবাসতো। তাকিয়ার মরদেহ দেখার পর কোনোভাবেই তার মৃত্যু বিশ্বাস করতে পারছে না তাইয়্যেবাহ।
নিহত ছোট বোন সম্পর্কে আর্জিনা বলেন, আমার বোন (তাকিয়া) ও আমি একসঙ্গেই সজীব ফ্যাক্টরির নোসিলার কারখানায় কাজ করতাম। আমরা ৫ হাজার ৬০০ টাকা বেতন পেতাম। আমি জুনে কাজ ছেড়ে দেই। তাকিয়া ঈদের বোনাসের জন্য কাজ করে যায়। ঈদের পরপর তারও কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। এবার সে একবারের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে গেল।
ঢামেকে বুধবার হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে সিআইডি ও ঢাকা জেলা প্রশাসন।
উল্লেখ্য, ৮ জুলাই সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) আগুন লাগে। এ ঘটনায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। পুলিশ তাদের চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বুধবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে মালিক আবুল হাসেমসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে হাসেমের দুই ছেলের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
এআর/এমএইচএস