জয়যাত্রার প্রতিনিধি হতে চাইলেই গুনতে হতো টাকা
বিতর্কিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা আইপি টেলিভিশনে প্রতিনিধি হতে চাইলেই গুনতে হতো টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে ১০ থেকে ৫ লাখ টাকা দিতে হতো চাকরি প্রত্যাশীদের। টাকা ছাড়া জয়যাত্রায় কোনো নিয়োগ দিতেন না হেলেনা। এছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে মাসিক হারে চাঁদা নিতেন হেলেনা। সেই চাঁদার পরিমাণ দুই হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে তার অন্যতম দুই সহযোগী হাজেরা খাতুন (৪০) ও সানাউল্ল্যাহ নূরীকে (৪৭) আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)।
হাজেরা খাতুন জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম ও জয়যাত্রা টিভির জিএম (অ্যাডমিন) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। আর সানাউল্ল্যাহ নূরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনা জাহাঙ্গীরের এসব অনিয়মের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে র্যাব।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক হাজেরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০১৮ সাল থেকে হংকং থেকে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ করে জয়যাত্রা টিভি চালু করেন। এজন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়। অথচ হংকং থেকে বরাদ্দ ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে চ্যানেল সম্প্রচারের কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। এরপর জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচারের জন্য প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশের ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছে রিসিভার সরবরাহ করা হয়। প্রতিনিধিরা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সম্প্রচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে চাকরিচ্যুতসহ অন্য প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে তাদের হেনস্তা করা হতো।
দেশের প্রায় ৫০টি জেলায় জয়যাত্রা টিভি সম্প্রচারিত হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা প্রতিনিধি নিয়োগে ৩০-৫০ হাজার টাকা, উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগে ১০-২০ হাজার টাকা এককালীন দিতে হয়। এছাড়া প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে দুই-পাঁচ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। জয়যাত্রা টিভি প্রায় ৩৪টি দেশে সম্প্রচারিত হয়, যেখানে দেশের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতিনিধি নিয়োগে এক-পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হতো। এছাড়া তাদের কাছ থেকে মাসিক ২০-৫০ টাকা নেওয়া হতো।
জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের বিষয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ডোনার, জেনারেল মেম্বার, লাইফ টাইম মেম্বার ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এই সংগঠনের প্রায় ২০০ জন সদস্য রয়েছে। যাদের কাছ থেকে সদস্য পদ বাবদ ২০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। যার সামান্যই মানবিক কাজে ব্যবহার করে জয়যাত্রা টিভি। এই অর্থ দিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হতো। অবশিষ্ট অর্থ সন্তানদের নামে সঞ্চয় করেন হেলেনা।
তিনি বলেন, আটক সানাউল্ল্যা নুরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের সমন্বয় করতেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন। গাজীপুর এলাকায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। গাজীপুরে গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশও জয়যাত্রা টিভিতে দিতেন তিনি। এছাড়া তিনি গাজীপুর ও বিভিন্ন এলাকায় অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার নিশ্চিত করতেন।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসে চ্যানেল পরিচালনার টাকা হংকংয়ে পাঠানোর ভাউচার পেয়েছি। এছাড়া হেলেনার জমি-ফ্ল্যাট সংক্রান্ত তার তথ্য ও হাজেরার দেওয়া তথ্যে গড়মিল পাওয়া গেছে। অর্থের বিষয়গুলো সিআইডি তদন্ত করবে এবং দুদককে অবহিত করা হবে।
অননুমোদিত আইপির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও তথ্য মন্ত্রণালয় দেখছে। তারা যদি মনে করে এসব বন্ধ করতে আমাদের সহায়তা নেবে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এছাড়া যাচাই-বাছাই করে তথ্য আমরা বিটিআরসিকে দিচ্ছি। যারা প্রতারণার মাধ্যমে মিথ্যাচার ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে, র্যাব তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে। র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এমএসি/এসএসএইচ