পুলিশ এলেই অলিগলি ফাঁকা, দোকান-পাট বন্ধ
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের জন্য শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। যা চলবে আগামী ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত। বিধিনিষেধে বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বিধিনিষেধে শপিংমল ও মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক যেমন- বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক ও পার্টি ইত্যাদি এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইনে বা খাবার সরবরাহ) করাসহ মোট ২৩টি বিষয় প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিধিনিষেধে পুলিশ দিনে দুই থেকে তিন বার থানার আওতাধীন প্রধান সড়ক, পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও হাট-বাজারে টহল দেয়। এ সময় মহল্লার কোনো গলিতে টহল পুলিশ গেলেই ওই খবর পৌঁছে যায় অন্যপ্রান্তে। এরই মধ্যে খালি হয়ে যায় রাস্তা, বন্ধ হয়ে যায় দোকান, ভিড় কমে যায় হাট-বাজারগুলোতেও। তবে এর মধ্যে যারা দোকান বন্ধ বা রাস্তা থেকে সরতে পারেন না, তারা পড়েন বিপদে। পুলিশ এসব দোকান বন্ধ করে দেয়। অনেকে ধরাও পড়েন।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক সোহরাবের নেতৃত্বাধীন একটি টহল গাড়ির সঙ্গে মোহাম্মদপুরের শেরে-ই-বাংলা রোড ঘুরে দেখা যায়, পুলিশের টহল দেওয়া যেন সবাই স্বাভাবিকভাবে দেখছেন। কেউ কেউ দোকান বন্ধ করছেন। আবার কেউ দিব্বি খোলা রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষ পুলিশের টহল ভ্যান দেখেও না দেখার ভান করছেন।
বিধিনিষেধের টহলে কী কী বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন জানতে চাইলে সহকারী উপ-পরিদর্শক সোহরাব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিধিনিষেধে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি-না সেগুলো দেখছি। টহলের গাড়ি যখন যায় তখন একদিকে লোকজন কম থাকলেও অন্য দিকে ভরপুর থাকে। একদিকে দোকান বন্ধ করলে অন্যদিকে দোকান খোলে। আমরা সবসময় টহল দেই। জনগণ আইনকে সম্মান না করলে মুশকিল। বিটপ্রতি একটা টহল গাড়ি সব সামলে উঠতে পারে না। তারপরও যারা আইন মানে না তাদের ধরতে পারলে থানায় নেওয়া হয়।’
মোহাম্মদপুর থানার ডিউটি অফিসার সাইদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের আটটি টিম পুলিশ ভ্যানে ডিউটি করছে। এছাড়াও চারটি টিম মোটরসাইকেলে টহল দিচ্ছে। বিধিনিষেধ না মানায় কাউকে আটক করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া জরিমানা করতে পারি না। তাদের প্রসিকিউশন করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত ব্যবস্থা নিয়ে ২০০/৩০০/৫০০ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন। মানুষের কাছ থেকে ৫০০/১০০০ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার যে অভিযোগ, সেটি আমার জানা নেই। জনগণ বোঝে না, তারা জরিমানা কোর্টে দেয়। আমরা সঙ্গে নিয়ে যাই শুধুমাত্র।’
বিধিনিষেধে থানার টহল পুলিশ চলমান কাজের বাইরে আলাদা কোনো কাজ করছে কি-না এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিট অফিসার যারা আছেন তারা তাদের বিট এলাকাটা দেখছেন। মোটরসাইকেলে মোবাইল টিম লেন বাই লেন দেখছে। অন্যদিকে থানার যে গাড়িতে টহল টিম থাকে তারা পুরো এলাকা ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেখানে গাড়ি ঢুকতে পারে না সেখানে মোটরসাইকেল টিম যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সব অলিগলিতে পুলিশ রাখা যায় না। এত জনবলও নেই। আমাদের জনবল যা আছে সেটাকে ম্যানেজ করে যতটুকু কাজ করা সম্ভব আমরা করছি। আগেও এলাকায় ঘুরে ঘুরে টহল দেওয়া হতো। এখন বিধিনিষেধে সবাই আইনটা মানছে কি-না সেটা জোরালোভাবে দেখতে হচ্ছে। এটা আমাদের নিয়মিত কাজের বাইরের একটা কাজ।’
এমএইচএন/ওএফ