ঘাট সরালে লাভ নেই, ২০০ কোটি টাকাই জলে যাবে
ফেরির ধাক্কা থেকে পদ্মা সেতু রক্ষার জন্য মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট বা মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তবে ঘাট স্থানান্তর শুধুই অর্থের অপচয় হবে বলে মনে করছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশেষজ্ঞরাও তাই মনে করছেন। তারা বলছেন, গেল বছরের নভেম্বরে নদীশাসন কাজের সুবিধার জন্য প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁঠালবাড়ি ঘাট সরিয়ে বাংলাবাজারে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এবার ঘাট সরালে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা লাগবে। যা খরচ করলে আদতে কোনো লাভ হবে না। উল্টো পদ্মা সেতুই ঝুঁকিতে পড়বে।
এদিকে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর ৪ নম্বর থেকে ১২ নম্বর খুঁটি পর্যন্ত ফেরি চলাচলের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।
গত শুক্রবার সকালে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর খুঁটিতে ধাক্কা দেয় রো রো ফেরি শাহজালাল। এ ঘটনার তদন্তের জন্য বিআইডব্লিউটিসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। তদন্ত কমিটি বিআইডব্লিউটিসির কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গত রোববার (২৫ জুলাই)। তদন্ত কমিটি পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে শিমুলিয়া ফেরিঘাট পুরাতন মাওয়া ঘাটে অথবা বাংলাবাজার ঘাটটি মাঝিরকান্দির ঘাটে স্থানান্তরের সুপারিশ করেছে। বিআইডব্লিউটিসি তদন্ত কমিটির সুপারিশের বিষয়টি গত ২৫ জুলাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগের কাছে পাঠিয়েছে।
ঘাট সরানোর সুপারিশের চিঠি পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছেও দিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী রজব আলী বলেন, মাওয়া ঘাট থেকে জাজিরা পর্যন্ত সেতুর স্প্যানের আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি দূরত্ব নিরাপত্তা বজায় রেখেই রাখা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বিজ্ঞানসম্মতভাবে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। এখন নতুন করে ঘাট সরানো হলে পুরো প্রক্রিয়ায় একটা ব্যাঘাত দেখা দেবে।
জানা গেছে, প্রকল্পের নদী শাসনের জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে মাওয়া ফেরিঘাট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে। তা দেওয়া হয় ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বরের চুক্তি অনুসারে। নদীশাসনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেবে। আগের মাওয়া ঘাটে ফেরিঘাট স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হলে তিন মৌসুম নদীশাসনের কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
এ সময় নদীশাসনের কাজ যদি না করা যায় এবং মাওয়া প্রান্তে নদীভাঙন শুরু হয়, তাহলে ঝুঁকিতে পড়বে পদ্মা সেতু। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, ঘাট স্থানান্তরের কাজ শুরু করলে নির্দিষ্ট সময়ে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করা যাবে না। ঘাট স্থানান্তরে এক থেকে দেড় বছর লাগবে। আর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতে লাগবে ১১ মাস।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসিকে চিঠির মাধ্যমে জবাব দেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ আগামী বর্ষায় পদ্মা নদীতে ফেরি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হবে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে পুরাতন ফেরি সরিয়ে নতুন ফেরি আনা হবে। তীব্র স্রোত প্রতিরোধী ফেরি এ নৌপথে নেই।
মাস্টার ও সুকানির অসতর্কতায় ফেরি শাহজালাল পদ্মা সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা খেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিআইডব্লিউটিসির চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। দুর্ঘটনার জন্য ফেরির মাস্টার আব্দুর রহমান খান ও সুকানি সাইফুল ইসলামকে দায়ী করেছে কমিটি।
কমিটি গত রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের কাছে। ওই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান। তদন্ত কমিটি তিনটি সুপারিশ করেছে।
এগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতুকে এড়িয়ে চলতে শিমুলিয়া ঘাট পুরনো মাওয়া ঘাটে অথবা বাংলাবাজার ঘাট শরীয়তপুরের পুরনো মাঝিরকান্দি ঘাটে স্থানান্তর; দ্বিতীয়ত শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে চলাচলকারী দুর্বল ফেরি সরিয়ে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম দ্রুতগতির ফেরি চালু; সর্বশেষ, পদ্মা সেতুর পাইল ক্যাপে ফেন্ডার (টায়ারের মতো রাবার) স্থাপন।
পিএসডি/ওএফ/জেএস