আইসিইউ শয্যা খালি নেই চট্টগ্রামের তিন সরকারি হাসপাতালে
চলতি মাসের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বাড়তি রোগীর চাপ পড়েছে জেলার সরকারি সব হাসপাতালে। এরই মধ্যে সরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যার পাশাপাশি আইসিইউ শয্যাও পূর্ণ হয়েছে রোগীতে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, ১ থেকে ২৪ জুলাই (আজ শনিবার) পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৩৮ জন। এ সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭৩ জন। অথচ গত জুন মাসে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ২৫৯ জন। এ সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৭৯ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৪ হাজার ৫৬২ জন। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৭৪ জন।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ফোকাল পারসন ডা. মো. আব্দুর রব ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ শয্যা আছে। আজ দুপুর পর্যন্ত প্রত্যেকটি শয্যায় রোগী ভর্তি। আইসিইউ প্রয়োজন এমন সাতজন রোগী ভর্তি আছেন আইসোলেশন ওয়ার্ডে। আইসিইউ শয্যা খালি না থাকায় তাদের ভর্তি করা যাচ্ছে না। আইসিইউয়ের সিট খালি হলে অন্য রোগীদের ভর্তি করা যাবে। এছাড়া হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডেও সবগুলো বেডে রোগী আছে। বর্তমানে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৪০ জন রোগী ভর্তি আছেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের সবারই প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলেই রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ফলে অনেকেরই অক্সিজেন লাগছে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেও রোগীর চাপ বেড়েছে অনেক। চমেক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আইসিইউ রোগীতে পূর্ণ। একই অবস্থা ওয়ার্ডেও। বর্তমানে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৭৩ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলের করোনা ইউনিটের আইসিইউ শয্যা ১০টি। সবগুলোতেই রোগী ভর্তি। গত কয়েকদিন ধরেই আইসিইউ ইউনিটে শয্যা খালি থাকে না। করোনা ওয়ার্ডের সাধারণ বেডে ২৭৩ জন রোগী ভর্তি আছে। মাঝে দুইদিন ৩০০ বেডেই রোগী ভর্তি ছিল।
তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সামনে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে; সেই চিন্তা থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। করোনা ওয়ার্ডে আরও ৬০টি অক্সিজেনের পোর্ট বাড়ানো হয়েছে। শয্যা ৩০০ এর উপরে বাড়ানো যাবে না। তবে করোনা ওয়ার্ডে দুই বেডের মাঝে মেট্রেস দিয়ে রোগী রাখা যাবে। এ জন্য আমরা অক্সিজেনের পোর্ট বাড়িয়েছি। এখন পর্যন্ত সাধারণ শয্যার রোগী কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
এদিকে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত সরকারি বিআইটিআইডি হাসপাতালেও করোনা আক্রান্ত রোগীদের তীব্র চাপ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক ও করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. মামুনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪৫ শয্যার হাসপাতালটিতে রোগী রোগী ভর্তি আছেন ৩৮ জন। হাসপাতালটিতে আইসিইউ শয্যা আছে পাঁচটি। এগুলো কখনোই খালি থাকে না।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ বেড়েছে। করোনার প্রথম ঢেউ থেকে শিক্ষা নিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আইসিইউ শয্যার সংকট সারা দেশেই আছে। এই সংকট উত্তরণের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, করোনার লক্ষণ দেখা দিলেই আইসোলেশনে যেতে হবে। আর করোনা পজিটিভ হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলেই সংকট থেকে রক্ষা করা যাবে।
কেএম/এসকেডি