কুর্মিটোলায় আইসিইউ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন করোনা রোগীরা
দেশে দিন দিন কারোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশেরই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় দ্রুত তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এতে দেশের হাসপাতাল ও করোনার চিকিৎসা সেবার ওপর চাপ বাড়ছে।
ক্রমাগত করোনা রোগী বাড়তে থাকায় কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন, চিকিৎসা সামগ্রীসহ আইসিইউর সংকট দেখা দিচ্ছে। অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও আইসিইউ পাচ্ছেন না। এতে এসব রোগীর অবস্থা আরও ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে।
আইসিইউ সংকটের এমনই চিত্র দেখা গেল রাজধানীর করোনা বিশেষায়িত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। শনিবার (২৪ জুলাই) হাসপাতালটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১২টার দিকে সাইরেন বাজিয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে এসে একটি অ্যাম্বুলেন্স থামে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এক বৃদ্ধকে তার ছেলে ও চালক নামিয়ে হাসপাতালের একটি হুইল চেয়ারে বসান। ওই ব্যক্তিকে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগতে দেখা গেছে।
হুইল চেয়ারে করে বৃদ্ধকে তার ছেলে এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক হাসপাতালের ভর্তি কাউন্টারে নিয়ে যান। সেখানে কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওই ব্যক্তিকে তার ছেলে ও চালক আবার অ্যাম্বুলেন্সে তোলেন। তখন ওই বৃদ্ধর শ্বাসকষ্টের মাত্রা কিছুটা বেড়ে যেতে দেখা যায়।
বৃদ্ধের ছেলে কাজী হোসাইনের (৩৫) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বাবার নাম মোশারফ হোসাইন (৭৮)। তারা মিরপুরের বাসিন্দা। তার বাবা গত চার দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মিরপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু আজ তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেই হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় এখানে (কুর্মিটোলা) নিয়ে আসেন। কিন্তু কুর্মিটোলায় এসেও তাদের নিরাশ হতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে কোনো আইসিইউ বেড খালি নেই।
এ বিষয়ে কাজী হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবার অবস্থা খুব খারাপ। এখানে তো আইসিইউ পাইনি। এখন মহাখালীতে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে যাচ্ছি। দেখি সেখানে আইসিইউ পাওয়া যায় কি না।
শনিবার সকাল থেকে অনেক রোগী শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বসে আছেন। হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী চলে আসায় তাদেরও ভর্তি হতে সমস্যা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়া থেকে বড় ভাই জুলহাস মিয়াকে (৪৫) কুর্মিটোলায় নিয়ে এসেছেন কাজীম মিয়া (৪২)। তিনি জানান, তার ভাই গত তিন দিন ধরে জ্বর ও ঠাণ্ডা-কাশিতে ভুগছিলেন। হঠাৎ আজ সকালে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। সকালে হাসপাতালে এলেও তার ভাইকে এখনও ভর্তি করাতে পারেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বলেছে, হাসপাতালের সব বেডে করোনা রোগী ভর্তি আছে।
তবে ভাইকে ভর্তি করার ব্যবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করবে- এমন কথায় আশায় বুক বেঁধে কুর্মিটোলার ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে বসে আছেন কাজীম মিয়া।
কাজীম বলেন, ‘ভাইকে নিয়ে আসার পর হাসপাতাল থেইকা একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাইয়ের জন্য দিছে। হেইডা থেকে শ্বাস নিয়ে আমার ভাই এখনও বাইচ্ছা আছে। আমরা এখনও ইমার্জেন্সির সামনে বইসা আছি। ভর্তি নিলে ভাইরে নিইয়া ভিতরে যাব।’
শুধু আইসিইউ-ই নয়, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জেলা শহরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় স্বজনরা করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে ঢাকামুখী হচ্ছেন।
নোয়াখালী সদর হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট থাকায় স্ত্রী নিলুফা আক্তারকে (৩২) নিয়ে শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন মো. আলী (৪০)।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিল। কিন্তু গতকাল (শুক্রবার) হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট দেখা দেওয়ায় আমার স্ত্রীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। পরে অক্সিজেনের জন্য বাধ্য হয়ে রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে এনে এখানে ভর্তি করিয়েছি। এখানে তাকে সার্বক্ষণিক সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এখন সে ভালো আছে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে কোভিড রোগী ভর্তি করার সক্ষমতা ৩০০ হলেও বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৩৪৩ জন রোগী। আইসিইউ বেড রয়েছে ১০টি। বর্তমানে কোনো আইসিইউ বেড খালি নেই। সব সিটেই করোনা রোগীতে ভর্তি আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে ৩২ করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন আর ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৭ জন। এছাড়া হাসপাতালটিতে করোনার চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ৪৩৯টি, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংখ্যা ৫৭টি ও অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরের রয়েছে ৩৯টি।
এমএসি/এসএসএইচ