পশু জবাই-চামড়া সংগ্রহে কমেছে মাদরাসাছাত্রদের ব্যবহার
মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ দেশের কওমি মাদরাসাগুলো। ফলে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এবার নিজ নিজ বাড়িতে ঈদুল আজহা উদযাপনের সুযোগ পেয়েছেন। এ কারণে এবার কোরবানির পশু জবাই এবং চামড়া সংগ্রহে কম দেখা গেছে কওমি মাদরাসার শিশু-কিশোরদের। তবে, রাজধানীর বেশকিছু মাদরাসা বিশেষ ব্যবস্থায় অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীকে এ কাজে ব্যবহার করেছে।
বুধবার (২১ জুলাই) রাজধানীর কয়েকটি এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার খুবই কম সংখ্যক মাদরাসার শিক্ষার্থী কোরবানির পশু জবাই ও চামড়া সংগ্রহ করছেন। সিংহভাগ পশু জবাইয়ের কাজ করেছেন মাদরাসার শিক্ষকরা। তাদের পাশাপাশি কিছু কিশোর বয়সী শিক্ষার্থী কোরবানির গরু-ছাগল জবাই করেছেন। বড়দের সঙ্গে হেঁটে বা ভ্যানে চামড়া সংগ্রহের কাজ করতে দেখা গেছে শিশু শিক্ষার্থীদের।
কওমি মাদরাসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে কাঁচা চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় এবার চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ কম কওমি মাদরাসার। এছাড়া ঈদের আগে কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দিতে বারবার আহ্বান জানালেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। ফলে মাদরাসার কাছেই বসবাস করেন এমন শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় কাজ করেত আগ্রহ দেখালে কেবল তাদেরই নেওয়া হয়েছে। তারাই ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পশু জবাই ও বিনামূল্যে চামড়া সংগ্রহ করছেন। কওমি মাদরাসাগুলো এবার টাকা দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করছে না।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় লালবাগ শাহী মাদরাসার ইফতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মঞ্জুর আহমদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি জানান, এবার তাদের মাদরাসার ২০ জন শিক্ষার্থী কয়েকজন শিক্ষকের নেতৃত্বে কোরবানির পশু জবাই ও চামড়া সংগ্রহ করছেন। তাদের টিমে দুজন শিক্ষার্থী পশু জবাইয়ের কাজ করছেন।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছর তাদের মাদরাসার শতাধিক শিক্ষার্থী চামড়া সংগ্রহের কাজ করলেও এবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন অল্পকিছু শিক্ষার্থী। কাউকে জোর করা হয়নি।
রাজধানীর হাতিরপুলে কথা হয় একই মাদরাসার আলিফ (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। ১৪ বছর বয়সী এ কিশোর জানান, রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন। মাদরাসা থেকে এবার কোরবানির পশু জবাই ও চামড়া সংগ্রহে কোনো চাপ ছিল না। তিনি স্বেচ্ছায় পশু জবাইয়ের কাজ করছেন। সকাল থেকে তিনটি গরু জবাই করেছেন।
রাজধানীর মানিকনগর রউযাতুল কোরআন মাদরাসা থেকে একজন শিক্ষক তার দুই শিশু শিক্ষার্থীকে নিয়ে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে এসেছেন সেগুনবাগিচায়। একটি ভ্যানের ওপর বসা ছিলেন মাদরাসার নূরানী বিভাগের ওই দুই শিক্ষার্থী। নাম রায়হান ও শরিফুল। বাসা মানিক নগরে। তারা জানায়, সকালে মাদরাসার হুজুর তাদের নিয়ে এসেছেন। এখানে ভ্যানে বসিয়ে রেখে হুজুর গরু জবাই করতে গেছেন। এখন পর্যন্ত তারা কোনো চামড়া সংগ্রহ করতে পারেনি।
সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর কাঁটাবন এলাকায় হাতিরপুল বাইতুল মোমিন হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার দুই শিক্ষার্থী আরাফ ও নাঈমের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, তাদের মাদরাসার ১১ জন শিক্ষার্থী এবার চামড়া সংগ্রহের কাজ করছেন।
১৫ বছর বয়সী আরাফ জানান, তিনি নিজে গরু জবাই করেছেন। নাঈম তাকে সহযোগিতা করেছে। নাঈমের বয়স কত— জানতে চাইলে আরাফ জানান, ৭-৮ বছর হবে। ‘আজ চামড়া সংগ্রহের পর আবার আমাদের ছুটি দেওয়া হবে’— বলেন আরাফ।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নূরে হেরা হিফজুল কোরআন মাদরাসার অধ্যক্ষসহ ছয়জনের একটি দল কোরবানির পশু জবাই ও চামড়া সংগ্রহের কাজ করছিলেন। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় শিক্ষক মো. রায়হানের। তিনি জানান, এ বছর মাদরাসা বন্ধ রয়েছে। তাই কোনো শিক্ষার্থী পশু জবাই এবং চামড়া সংগ্রহের কাজ করছে না। মাদরাসার বাবুর্চিসহ ছয়জনের একটি দল পশু জবাই করছেন। এছাড়া বিনামূল্যে কেউ চামড়া দিতে রাজি হলে তারা তা সংগ্রহ করছেন।
কওমি মাদরাসা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে মক্তব, ফোরকানিয়া ও কোরানিয়াসহ মোট মাদরাসার সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩১টি। এসব মাদরাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। জাকাত, কোরবানির পশুর সংগৃহীত চামড়া বিক্রির অর্থ কওমি মাদরাসার আয়ের অন্যতম উৎস। শুধু ঈদুল আজহায় পাওয়া কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে এসব মাদরাসার কয়েক মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব হয়। গতবার কোরবানির ঈদের আগে সীমিত পরিসরে কওমি মাদরাসা খোলার অনুমিত দেয় সরকার। এবার হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারকে বারবার আহ্বান জানালেও মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়া হয়নি।
এএইচআর/এইচকে/এমএআর/