শেষ দিনে অনলাইনে ৩১১ কোটি টাকার পশু বিক্রি
রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে সরাসরি ও অনলাইন উভয় মাধ্যমে কোরবানির পশু বেচাকেনা হয়। প্রথমবারের মতো এবার অনলাইন প্লাটফর্মে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অফিসের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৯ দিনে সাড়ে ২৭০০ কোটি টাকার বেশি পশু বিক্রি হয়েছে। পশুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় চার লাখ। প্রায় ১৮০০ অনলাইন হাটে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়াসহ কোরবানিযোগ্য পশুর ছবি আপলোড হয়েছে ১৮ লাখের বেশি। গত মঙ্গলবার (২০ জুলাই) একদিনে পশু বিক্রি হয়েছে ৩১১ কোটি টাকার উপরে।
মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কোরবানিযোগ্য পশু বিক্রয় কার্যক্রম অগ্রগতির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, এ পর্যন্ত (মঙ্গলবার সন্ধ্যা) মোট পশু বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৯টি। যার বিক্রয় মূল্য ২ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা ১১ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৮ টাকা। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৭১০টি ও ছাগল এবং ভেড়া রয়েছে ৯০ হাজার ৮৬৯টি। গত মঙ্গলবার একদিনে পশু বিক্রি হয়েছে ৩১১ কোটি ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৪ টাকা, পশুর সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ১৫১টি। ১ হাজার ৭৬৮টি অনলাইন বাজারে মোট ছবি আপলোড হয়েছে ১৮ লাখ ১২ হাজার ২০২টি। এর মধ্যে গরু-মহিষ ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮৪০টি ও ছাগল এবং ভেড়ার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৩৬২টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, অনলাইনে পশু বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ। এ বিভাগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৬৯ হাজার ২১১টি পশু বিক্রি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ১ হাজার ১৬৫ কোটি ৬৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকা। এর পরে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৪২টি পশু বিক্রি হয়েছে ৬২৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫২ টাকায়।
রাজশাহী বিভাগে ৫৮ হাজার ৯৫০টি পশু বিক্রি হয়েছে ৩৫৪ কোটি ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮ টাকায়। খুলনা বিভাগে ২৫ হাজার ৯৬১টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে ১৭১ কোটি ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকায়। বরিশাল বিভাগে চার হাজার ২৬১টি গবাদি পশু বিক্রি হয় ২৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ৪০০ টাকায়।
সিলেট বিভাগে ছয় হাজার ৭৪৫টি কোরবানির পশু বিক্রি হয় ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ ২৯ হাজার ৯০৮ টাকায়। রংপুর বিভাগে ৬৭ হাজার ৫৮২টি পশু বিক্রি হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯৬ লাখ ৭৮ হাজার ৫৯০ টাকায়। ময়মনসিংহ বিভাগে দুই হাজার ৪২৭টি পশু বিক্রি হয়েছে ২২ কোটি ৩৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৬০ টাকায়।
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সম্প্রসারণ শাখার পরিচালক ডা. দেবাশীষ দাশ জানিয়েছিলেন, প্রতিদিনই অনলাইনে পশু বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে। অনলাইন বাজার মূলত খামারি ও ক্রেতাদের মধ্যে একটা মেলবন্ধন তৈরি অন্যতম ভূমিকা রাখছে। কোনো খামারি চাইলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পশু অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া খামারিদের যে কোনো তথ্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সরবরাহ করছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার শাখা সূত্র জানায়, সারাদেশে চলতি বছর কোরবানিযোগ্য এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। গত বছর প্রস্তুত ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু। আর কোরবানি উপলক্ষে জবাই করা পশুর সংখ্যা ছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি। অবশ্য এর আগের বছরে এক কোটি চার থেকে পাঁচ হাজার পশু জবাই হয়েছে।
ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে কেনা পশু পরিবহনে হাসিল নয়
অনলাইন কিংবা ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে কেনা কোরবানির পশু পরিবহনের সময় হাসিল দাবি বা আদায় করা আইনানুগ নয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। বুধবার (১৪ জুলাই) এ চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক সরাসরি ও অনলাইন-ডিজিটাল প্লাটফর্মে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় অব্যাহত রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিকল্প বাজার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সভায় জানানো হয়, অনলাইন-ডিজিটাল প্লাটফর্মে বাজার পেরিফেরির বাইরে অথবা খামারির কাছ থেকে কেনা পশু পরিবহনকালে ইজারাদার বা তার নিয়োজিত লোকজন হাসিল দাবি বা আদায় করার চেষ্টা করছে, যা আইনানুগ নয়।
এতে আরও বলা হয়, এ অবস্থায় শুধু অনলাইন-ডিজিটাল প্লাটফর্মে বাজার পেরিফেরির বাইরে অথবা খামারির কাছ থেকে কেনা পশু পরিবহন করার সময় ইজারাদার বা তার নিয়োজিত লোকজন যাতে হাসিল দাবি বা আদায় করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রিতে মানতে হবে যেসব নিয়ম
ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম বাধ্যতামূলক করেছে কর্তৃপক্ষ। ডিজিটাল কোরবানির হাটের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকা বা গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রির জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অথবা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে। তবে যারা সদস্য নন তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক) মো. হাফিজুর রহমান।
আবেদনকারীদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র নির্বাচিতরাই ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রির জন্য নিবন্ধিত হবেন। নিবন্ধনের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না। বিক্রেতা নির্বাচনের জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।
বিক্রেতার ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। বিক্রেতাকে ভেন্ডর রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য পেশ করতে হবে। সঙ্গে ছবি এবং স্বত্বাধিকারী বা প্রতিনিধির জাতীয় পরিচয়পত্র পেশ করতে হবে। বিক্রেতাকে www.digitalhaat.net এ রেজিস্ট্রেশন ফর্মে যাবতীয় তথ্য পূরণ করে আবেদন করতে হবে। বিক্রেতার সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের পর ডিজিটাল হাট কর্তৃপক্ষ বিক্রেতাকে ভেন্ডর হিসেবে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
বিক্রেতার সাইটের এপিআই ইন্টিগ্রেট করতে হবে। যদি এপিআই না থাকে সেক্ষেত্রে বিক্রেতাকে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে, যা দিয়ে তিনি পশুর ছবি আপলোড করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে আপডেট করতে পারবেন। এই পাসওয়ার্ড কোনোভাবে দ্বিতীয় ব্যক্তির সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না।
যেসব তথ্য পূর্বেই দিতে হবে : স্বত্বাধিকারীর নাম, মোবাইল নম্বর, নিয়োজিত প্রতিনিধির নাম, মোবাইল নম্বর, বিকল্প মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি, প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সের কপি, প্রতিষ্ঠানের লোগো, স্বত্বাধীকারীর বা প্রতিনিধির এনআইডি, প্রতিষ্ঠানের/ স্বত্বাধীকারীর /প্রতিনিধির ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য রাউটিং নম্বর, সুইফট কোডসহ (হিসাবের নাম, নম্বর, ব্যাংক ও ব্রাঞ্চ)।
অ্যাসোসিয়েশনের নাম, অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার আইডি ও রিনিউ করার তারিখ উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া বিক্রেতা নির্বাচক পরিষদ নির্দেশিকা অনুসরণ করে মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিষদ গঠন করবে।
একে/এসকেডি