ভুয়া সনদের মাধ্যমে চাকরি দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ
ভুয়া সনদ, জাল সিল ও কাগজপত্র তৈরি করে সুকৌশলে চাকরি দিয়ে এবং চাকরি দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি প্রতারক চক্রের প্রধান আব্দুল মালেককে আটক করেছে র্যাব-৪। চক্রটির তিন সদস্য পলাতক রয়েছেন। তাদের আটক করার জন্য র্যাব অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
প্রতারক আব্দুল মালেককে আটকের সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল কাগজপত্র ও সিল জব্দ করা হয়। রোববার (১৯ জুলাই) দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর মনিপুরীপাড়া থেকে তাকে আটক করে র্যাব।
সোমবার (১৯ জুলাই) কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেল হক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মো. আব্দুল মালেক জানায়, চক্রের পলাতক তিন সদস্য আব্দুর রাজ্জাক (৫০), আল-আমিন (২৫), অবিনাশ (৩২) মিলে প্রতারণা করে আসছিল। আব্দুল মালেক ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে দাখিল এবং ১৯৯৫ সালে আলিম পাস করে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে বি.কম এবং এম.কম ডিগ্রি লাভ করে। সে শিক্ষাজীবন শেষ করে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে অফিস সহাকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পায়। চাকরি পাওয়ার পর থেকে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১০ সালে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাকে ২০১৫ সালে চাকরিচ্যুত করে।
যে কৌশলে প্রতারণা করে আব্দুল মাকেল
মোজাম্মেল হক বলেন, প্রথমে নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এজেন্ট নিয়োগ করে চাকরিপ্রার্থীদের সংগ্রহের কাজ শুরু করে আব্দুল মালেক। পরে সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য একটি কোচিং সেন্টার চালু করে ২০১৬ সালে। কোচিং সেন্টারটির নাম এমবিশন।
তিনি বলেন, কোচিং চলাকালে চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন কোটার অন্তর্ভুক্ত তাদের আলাদা করে সে। পরে নগদ অর্থ অথবা জমির দলিল জমা রাখার শর্তে চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় আবুল মালেক। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় যে, চাকরি প্রত্যাশীদের সে তদবির করে চাকরি দিয়ে দেবে। এজন্য তাকে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে। চুক্তির মাধ্যমে ঠিক করা টাকা থেকে অগ্রিম টাকাও নেয় আবুল মালেক। পরে চুক্তি শেষে বিভিন্ন মাধ্যম যেমন-লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীর ছবি পরিবর্তন/প্রশ্নফাঁস/প্রার্থীকে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাস করানো হয়।
র্যাব-৪ অধিনায়ক বলেন, চাকরি প্রত্যাশীদের পাস করানোর ক্ষেত্রে নকল বিভিন্ন সনদ ও সার্টিফিকেট ব্যবহার করত আবুল মালেক। চাকরি পাওয়ার পর কোনো চাকরি প্রত্যাশী যদি তাকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দিত তাহলে সে জমা করা জমির দলিলের মাধ্যমে প্রার্থীর জমি দখল করত। আবার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের চাকরির ব্যবস্থা না করেও অর্থ আত্মসাৎ করে। এছাড়া যারা এই প্রক্রিয়ায় চাকরি পেত তাদেরকে জিম্মি করার উদ্দেশ্যে তাদের সব ধরনের কাগজপত্র জমা রাখত সে। যাতে পরে তাদের কেউ ঝামেলা করলেই তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ দিতে পারে।
প্রতারণার মাধ্যমে আবদুল মালেক আত্মসাৎ করা অর্থের বিবরণ দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকে আব্দুল মালেকের একাধিক অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখেরও বেশি টাকার এফডিআর রয়েছে। ঢাকা জেলার ধামরাই থানাধীন ফোর্ডনগর এলাকায় ৮.২৫ শতাংশ জমি রয়েছে তারা।
অন্যদিকে রাজধানীর মনিপুরী এবং ৬০ ফিট এলাকায় তার তিনটি ফ্লাট রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি টাকা। নিজ জেলা কুষ্টিয়ায় সদর থানাধীন বড়িয়া এলাকায় জাহান সুপার মার্কেট ছাড়াও নিজ গ্রামে ২৫ বিঘা জমি এবং একটি পাকা বাড়ি রয়েছে। কুষ্টিয়ায় তার জাহান গ্রুপ নামে একটি কনজ্যুমার প্রোডাক্ট কারখানা রয়েছে। এছাড়া তার কুষ্টিয়া এক্সপ্রেস নামে একটি বাস ও ৪টি ট্রাকও রয়েছে তার।
আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান বলেও তিনি জানান।
এমএসি/জেডএস