ফেরার দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ছুটছে ঘরমুখো মানুষজন
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। ঈদের পর বাড়ি থেকে ফেরা নিয়ে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়ার শঙ্কায় ঘরমুখো যাত্রীরা। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল থাকলেও এরপর থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। আর এ শঙ্কা মাথায় নিয়েই ঘরমুখো হচ্ছেন মানুষজন।
আগামী বুধবার (২১ জুলাই) দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে গত ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে আগামী ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল থাকছে।
এ অবস্থায় পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যাওয়ার জন্য সময় দিলেও বাড়ি থেকে ফেরার জন্য মাত্র একদিন সময় দিয়েছে। সরকারি এই নির্দেশনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়টি নিয়ে আগেই ভাবা উচিত ছিল। কারণ এ সিদ্ধান্তে সাধারণ যাত্রীরা ভয়াবহ বিপদে পড়বেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে বা যারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত সংবলিত প্রজ্ঞাপন তৈরি করেছেন তারা ভুল করেছেন। এই ভুলের মাশুল সাধারণ মানুষকে দিতে হবে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, সরকারের নির্দেশনা আমরা প্রতিপালন করব। তবে এর আগেও আমরা দেখেছি- গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও যাত্রীরা বিকল্প পরিবহনে যাতায়াত করেছেন। এবারও তাই দেখতে হবে।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, করোনার আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে ঈদযাত্রার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য একটা চাপ থাকত। এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তারপর সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছে, আট দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। আট দিন পর আবার বিধিনিষেধ থাকছে। কিন্তু ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় দিয়ে এবার আর ফেরার সময় দেওয়া হচ্ছে না। তাতে বিপর্যয় তৈরি হবে।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে, ঈদুল আজহা উদযাপনের জন্য চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। তা বলবত থাকছে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত। সব ধরনের বিধিনিষেধ শিথিল থাকছে।
বলা হয়েছে, ২৩ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ৫ অগাস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ থাকছে। বিধিনিষেধ শিথিল করায় অন্যান্য পরিবহনের মতে ট্রেনেও ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। তবে ঈদযাত্রায় অন্যান্য সময়ের মতো যাত্রীদের হুড়োহুড়ি নেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।
শনিবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় একের পর এক ট্রেন। ট্রেনযাত্রীরা অনলাইনে টিকিট কেটে ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলছে যাত্রীবাহী ট্রেন।
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে শনিবার (১৭ জুলাই) বাড়ি যাওয়ার জন্য ওই ট্রেনে উঠেন শরীফুল আজিম। তিনি বলেন, বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু ফেরার জন্য কোনো টিকিট পাইনি। কিভাবে ফিরব জানি না।
মঙ্গলবার একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে দিনাজপুর যাবার টিকিট পেয়েছেন জয়নুল আবেদীন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন দিন বাড়তি ছুটি নিয়ে দিনাজপুর যাব। তবে ফেরার সময় বিধিনিষেধ থাকবে। ঢাকায় বিকল্পভাবে ফিরতে হবে।
রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট থেকে বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু তারাও বলছেন, ঈদের একদিন পর সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফিরবেন কীভাবে?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাত্রীরা বাড়ি যাচ্ছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বাড়ি যাচ্ছেন। তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বাড়ি যাওয়া শুরু করবেন দলবেঁধে। স্বাভাবিক সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দিনে গেলেও পরিবহনের সংকট হয়। এবার ঈদের পরদিন মানুষ একদিনে ঢাকায় এক সঙ্গে ফিরবে কীভাবে?
পিএসডি/ওএফ