আফতাব নগর হাটে গরুর সঙ্গে ছাগল ফ্রি
‘নিজের পালা (পালন) গরু, হারাম কোনো খাবার খাওয়াই নাই, দাম ১০ লাখ টাকা, নিলেই জিতবেন সাথে পাবেন খাসি (৩০ হাজার টাকার) ফ্রি’। এভাবেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছিলেন রাজধানীর আফতাব নগরের হাটের ব্যবসায়ী ইবাদত মোল্লা।
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এই হাটের বটতলা মোড়ে বিক্রির অপেক্ষায় থাকা হাটের সেরা গরুর একটি হলো ‘লাল মানিক’। লাল রঙের ষাঁড়টিতে মাংস হতে পারে ১৫-১৭ মণ। চার দাঁতের ষাঁড়টিকে মসুরি ও গমের ভুসি, ঘাস এবং খড় খাওয়ানো হয়েছে বলে দাবি পাবনা থেকে আসা এই ব্যবসায়ীর।
গরুটি দেখছেন হাটে আসা ক্রেতারা। অনেকে কৌতুহলবশত দাম জিজ্ঞেস করছেন। ১৫ জুলাই হাটে আনা ষাঁড়টির এ পর্যন্ত (শনিবার) বিক্রির মতো দাম উঠেনি, তবে কাছাকাছি দাম করছেন ক্রেতারা।
মালিবাগ থেকে আসা ক্রেতা মারুফ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরুটি দেখতে সুন্দর কিন্তু দাম অনেক বেশি। গরুটির দাম পাঁচ লাখ টাকা বলেছি, তাও দিচ্ছে না। এর বেশি বিক্রি হবে না।
মহাখালী থেকে আসা ক্রেতা নূর উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরুটি পছন্দ হয়েছে। তবে আহামরি বড় গরু না যে ১০ লাখ টাকা দাম হবে। আমি সাড়ে চার লাখ টাকা বলেছি।
তিনি বলেন, গরুটিতে মাংস হবে সর্বোচ্চ ১৪-১৫ মণ। ১৪-১৫ মণ মাংসের গরুর দাম কত হবে? কোরবানির গরু বলে দাম বলেছি কিন্তু দিচ্ছে না।
ব্যবসায়ী বাবা ইবাদত মোল্লাকে সহযোগিতা করতে আসা এইচএসসি পরীক্ষার্থী মিরাজ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি আমাদের নিজস্ব গাভীর বাছুর। বয়স সাড়ে তিন বছর। ওজন হবে ১৭ মণ। আদর করে আমরা নাম রেখেছি ‘লাল মানিক’। বাছুরটিকে মসুরি, গম ও ধানের ভুসি খাইয়ে বড় করেছি। হারাম কোনো কীট ও কিংবা ওষুধ জাতীয় খাবার খাওয়াইনি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খেয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের চাওয়া গরুটির দাম ১০ লাখ টাকা। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখি কত বিক্রি করা যায়। গরুটির সঙ্গে আমরা একটি খাসি ফ্রি দিচ্ছি। লাল মানিকের সঙ্গে আরও কিছু গরু এনেছি। সেগুলো এর চেয়ে ছোট। এর মধ্যে ৮ মণ মাংস হবে এরকম ষাঁড়টির দাম চাচ্ছি চার লাখ টাকা।
মিরাজ জানান, নিজের পালা তিনটিসহ মোট ১৭টি গরু হাটে এনেছি। কিন্তু এপর্যন্ত কোনো গরু বিক্রি হয়নি। ১৪টি গরুতে আমাদের ২০ লাখ টাকা ইনভেস্ট আছে। কিছু লাভ হলেই বিক্রি করে দেব।
বটতলা মোড়ের দক্ষিণ পাশে বিক্রির জন্য ১৯টি গরু নিয়ে অপেক্ষায় আছেন কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী রহমত আলী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন দিন হলো বাজারে এলাম, এখনও একটি গরুও বিক্রি হয়নি। ক্রেতা নেই, দাম বলছে না। আমরা কি করব চিন্তায় আছি।
হাটের ইজারাদার ওমর শরীফ দিপু ঢাকা পোস্ট বলেন, নিয়ম অনুসারে কোরবানির হাট হচ্ছে পাঁচ দিন। আজ সকালে থেকে পাঁচ দিনের হাট শুরু হয়েছে। সকাল থেকে অল্পকিছু পশু বিক্রি হয়েছে কিন্তু এখনও পুরো দমে বিক্রি শুরু হয়নি। তিনি বলেন, আজ তো সাপ্তাহিক ছুটি, ক্রেতা আসবে। কাল (রোববার) থেকে পুরো দমে বিক্রি শুরু হবে।
এবার দুই সিটি করপোরেশনে দুটি স্থায়ীসহ ২১টি হাট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে গাবতলী স্থায়ী হাট ছাড়াও ৯টি অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে সারুলিয়ার স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও ১০টি অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাকায় ২১টি পশুর হাট বসেছে।
দুই সিটি করপোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ২১ জুলাই (ঈদের দিন) পর্যন্ত পাঁচ দিন হাটে কোরবানির পশু বেচা-কেনা হবে।
এমআই/এসএসএইচ