লাখ টাকার নিচে গরু নেই আফতাব নগর হাটে
আর মাত্র ছয় দিন পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদ। এ সময় ক্রেতা-বিক্রেতায় ভরপুর হয়ে ওঠার কথা রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী আফতাব নগরের গরুর হাট। মেরুল বাড্ডা থেকে ইস্টার্ণ হাউজিং পর্যন্ত এই বিশাল এলাকার মধ্যে কেবল ইস্টার্ন হাউজিং এলাকার কিছু অংশে গরু উঠেছে। অর্থাৎ এখনও জমে ওঠেনি গরুর এই হাটটি। তবে দুএকদিনের মধ্যে জমে ওঠার অপেক্ষায় ব্যবসায়ী ও কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১৪ জুলাই) বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের এক পাশে খুঁটিতে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা রয়েছে লাল, সাদা, লাল-কালোসহ নানা ধরনের গরু। ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। গরুগুলোতে মাংস হবে ৪ থেকে ৬ মণ। শতাধিক ব্যবসায়ী এক থেকে দেড় হাজার গরু এনেছেন বাজারটিতে। এ কারণে ফাঁকা রয়েছে মাঠের বেশিরভাগ অংশ। গরু কম, হাটে ক্রেতাদের আনাগোনাও কম। হাটে আসা বিক্রেতারা অনেকটা অলস সময় পার করছেন।
হাট কর্তৃপক্ষ বলছেন, গতবছর এ হাটে ১০ থেকে ১২ হাজার গরু কেনা-বেচা হয়েছে। এবার পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর এলাকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী গরু নিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে আজ সারাদিনে ছয়টি গরু বিক্রি হয়েছে। কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে ‘লকডাউন’ উঠে যাচ্ছে। গরু আসতে শুরু করবে। এবার বাজারের সেরা গরু পাবনা, জামালপুর এবং কিশোরগঞ্জ থেকে আসবে। গরু তিনটির নাম হচ্ছে ‘ডন’, ‘কিশোরগঞ্জের বস’ এবং ‘মেসি’। এগুলো দাম হবে ১৮-২০ লাখ টাকা।
তারা জানান, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর এলাকার পাশাপাশি ফরিদপুর, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জ এলাকার গরু আসে হাটটিতে। এসব এলাকার গরু দুএকদিনের মধ্যে চলে আসবে। হাট কর্তৃপক্ষ জানান, আমাদের টার্গেটের চার ভাগের একভাগ গরু এসেছে। বাকি তিনভাগ গরু শিগগিরই আসবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার গরু দাম একটু বেশি। কারণ বেশি দামে গরু কিনতে হয়েছে। খাবারের দামও বেশি। তাই গরুর দাম গতবারের চেয়ে বেশি হবে। পাবনা থেকে ১৪টি গরু নিয়ে আসা রশিদ হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার গরুর দাম একটু বেশি। ৬-৭ মণ ওজনের একটি গরুর দাম ২ লাখ টাকা চাইছেন বলে জানান তিনি। এই ব্যবসায়ী বলেন, লাল রঙের গরুটি এক লাখ ৮০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করব।
দাম বেশি চাইছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার গরু কিনতে হয়েছে বেশি দামে। খাবারের দাম বেশি ছিল। তাই আমাদের বিক্রি করতেও হবে বেশি দামে। এছাড়া উপায় নেই। পাশে থাকা আরেকটি গরুর দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই গরুটিতেও মাংস হবে ৫ মণ। দাম এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। তিনি সাড়ে সাত মণ ওজনের একটি গরুর দাম চাইলেন ২ লাখ টাকা।
একটি লাল-কালো রঙের গরুর দাম জানতে চাইলে কুষ্টিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী আতাউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরুটির দুই দাঁত, মাংস হবে ৮-৯ মণ, দাম ২ লাখ টাকা। কত হলে বিক্রি করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক লাখ ৯০ হাজার টাকা।
পশ্চিম রামপুরা পাওয়ার হাউজের থেকে আফতাব নগর হাটে গরু কিনতে আসা আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুটি গরু দেখেছি। সবাই লাখ টাকার বেশি দাম চাইছে। তিনি বলেন, আতাউর রহমানের একটি সাদা চার দাঁতের গরু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাইছেন। আমি তাকে বললাম লাখের নিচে আসবেন কি না। উনি বললেন, না। তাই আর কথা বাড়াইনি।
আনিস বলেন, ব্যবসায়ীরা তো উল্টাপাল্টা দাম চাচ্ছেন। এখনও গরু আসেনি। আমরা এত পাগল হইনি যে এই দামে গরু কিনব। সময় আছে দেখে শুনে নেব।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর থেকে ১৩টি গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী আয়নাল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরু এখনও বিক্রি শুরু হয়নি। দেখা-শোনা হচ্ছে। তিনি ৬ মণ ওজনের গরুর দাম চাইলেন ২ লাখ টাকা, ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করবেন বলে জানান।
আফতাব নগর গরু-ছাগলের হাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এসএম তোফাজ্জল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখনও মাঠ প্রস্তুত করছি। আফতাব নগরে এবার ১০-১২ হাজার গরু কেনা-বেচার টার্গেট আমাদের। আজ পর্যন্ত এক থেকে দেড় হাজার গরু এসেছে। তিনি বলেন, আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রি শুরু করিনি। বৃহস্পতিবার মিলাদ হবে। এরপর হাসিলের জন্য লোকজন বসবে। এবার কয়টি হাসিল হবে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলে ১৩-১৪টি হাসিল থাকবে। হাসিলের রশিদ বানানো হচ্ছে।
কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে রশিদ দিয়ে বিক্রি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচটি গরু বিক্রি হয়েছে। এক লাখ টাকার নিচে কোনো গরু বিক্রি হয়নি।
তিনি বলেন, এখানে যা এসেছে বেশিরভাগই বড় গরু। দেশি ছোট গরু আসে মূলত ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর এসব এলাকা থেকে। আসবে আরও দুদিন পর। তখন এক লাখ টাকার নিচে গরু পাওয়া যাবে।
এবার দুই সিটি করপোরেশনে দুটি স্থায়ীসহ ২১টি হাট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে গাবতলী স্থায়ী হাট ছাড়াও ৯টি অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে সারুলিয়ার স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও ১০টি অস্থায়ী হাট বসানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঢাকায় ২১টি পশুর হাট বসেছে। দুই সিটি করপোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৭ জুলাই থেকে ২১ জুলাই (ঈদের দিন) পর্যন্ত পাঁচ দিন হাটে বেচা-কেনা করা যাবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির যে ১০টি অস্থায়ী হাট নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গা।
এছাড়া গোলাপবাগের ডিএসসিসি মার্কেটের পেছনের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা ও রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা। এছাড়া সারুলিয়া স্থায়ী হাটেও কোরবানির পশু পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তরে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ছাড়া আরও ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই সেকশন ৩-এর খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ, ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোল চত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাট, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনি বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা এবং উত্তরখান মৈনারটেক শহীদনগর হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা।
এমআই/এসএসএইচ