চট্টগ্রামের সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে
কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ বেড়েছে আরও সাত দিন। কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোর সঙ্গেই যেন সড়কে বেড়ে গেছে মানুষের আনাগোনা, বেড়েছে যানবাহনও। এমনকি দোকানপাটও খোলা শুরু হয়েছে। তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন অফিস আদালত খোলার কারণে সড়কে গাড়ি ও মানুষের চলাচল বেড়েছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস, লালখান বাজার, প্রবর্ত্তক মোড়, কাজির দেউড়ী, এনায়েত বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের চলাচল অনেক বেড়েছে।
এছাড়া বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস মোড়ে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ও প্রচুর রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। শুধু টাইগারপাস নয়, চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ী, গোলপাহাড় মোড়, জবলী রোড এলাকায় রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে, যা বিধিনিষেধের প্রথম দুই দিনের তুলনায় অনেক বেশি। এসব স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি।
দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমদ অনিক। এ সময় বিনা কারণে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় দুটি গাড়িকে জরিমানা করেন তিনি। অভিযানে মোস্তাক আহমদ নামে একজনের গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জবাবে মোস্তাক আহমেদ বলেন, গাড়ি সার্ভিসিং করার জন্য বের হয়েছি। তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর পাঁচ মিনিট পর একটি প্রাইভেটকারকে দেখে থামার সংকেত দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই গাড়িতে তিন জনকে বসে থাকতে দেখা যায়। গাড়ির মালিক আরমানের কাছে বের হওয়ার কারণ জানতে চান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জবাবে আরমান বলেন, তিনি মিলাদ পড়াতে যাচ্ছেন, সেই জন্য বাসা থেকে বের হয়েছেন। তাকেও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষ বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে। যারা নির্দিষ্ট কারণ দেখাতে পারছে না তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এতদিন জরিমানার পরিমাণ কম করলেও আজ থেকে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর জুবলী রোড ও বাটালী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দোকানের কিছু অংশ খুলে ব্যবসা করছেন দোকানিরা। এছাড়া অনেক দোকানিকে দোকানের সামনে বসে থাকতে দেখা গেছে। কাস্টমার এলেই দোকানের শাটার সামান্য খুলে মালামাল বিক্রি করছেন তারা৷ সেই সঙ্গে রাস্তায় অনেককেই মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে।
রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের চলাচল বাড়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, সোমবার থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কারণে প্রচুর মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। মানুষ বিনা কারণে, সামান্য অজুহাতে বাসা থেকে বের হচ্ছে। মানুষ যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের না হয়, সেজন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষ যদি বিনা প্রয়োজনে লকডাউন ভেঙে বাইরে বের হয়, তাহলে আমরা এখন থেকে কঠোর হব। অন্যদিনের তুলনায় আজ জরিমানা বেশি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে যারা বিনা প্রয়োজনে বের হবে তাদের আটক করে রাখা হবে। গতকাল (সোমবার) থেকে যেহেতু দেখতে পাচ্ছি মানুষ সামান্য অজুহাতে বের হচ্ছে, সে কারণে আজ চট্টগ্রাম নগরীতে ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে কখনও এত মোবাইল কোর্ট একদিনে পরিচালনা করা হয়নি। যারা নিয়ম ভেঙে বের হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আরও বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস। শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মানুষদের ঘরে রাখা সম্ভব নয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি জানান, কোনো রেস্টুরেন্টে বসিয়ে খাবার খাওয়ালে সিলগালা করে দেওয়া হবে। আমরা চাই না, কেউ বিনা প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হয়ে আসবে। আজ থেকে পথচারীদেরও জরিমানার আওতায় নিয়ে আসব।
লকডাউনের বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে ২০টি চেকপোস্ট স্থাপন করে গাড়ি নিয়ে বের হওয়া মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপ্রয়োজনে কেউ বের হলে তাকে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
লকডাউনের প্রথম দুই-তিন দিনের তুলনায় আজ সড়কে গাড়ি সংখ্যা বেশি। এ বিষয়ে পুলিশের কোনো শিথিলতা আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আসলে শিথিলতা নয়। প্রথম চারদিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এখন যেহেতু এগুলো খুলছে, সে কারণে রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। এরপরও পুলিশ তৎপর আছে যাতে কেউ অপ্রয়োজনে বের না হতে পারে।
কেএম/এসএসএইচ